অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা
বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী শহরের গর্ব উভয় বাংলার জনপ্রিয় লেখিকা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত সমাজকর্মী মহাশ্বেতা
সমাজের নানা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনতার প্রতিবাদের ভাষা শিল্প ভাষ্য হয়ে ফুটে উঠেছে জনপ্রিয় লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর লেখনী থেকে।তার মননে ও মানোষে মহাশ্বেতার সমগ্র পিত্র ও মাতৃ কুলের সংস্কৃতি এবং সাহিত্য চর্চার প্রভাব নিবিড় ভাবে কার্যকর ছিল।
জন্ম ১৯২৬ সালের ১৪ই জানুয়ারি ঢাকা আর্মানিটোলা জিন্দাবাদ লেনে মামার বাড়িতে এই বিখ্যাত লেখিকা জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠা রাজশাহী জেলার রাজশাহী শহরের মিয়া পাড়ার নিজ বাড়িতে।তাদের পারিবারিক পদবী ঘটক।পিতা মাতার নয় সন্তানের মধ্যে মহাশ্বেতা ছিলেন সবার বড়।
মহাশ্বেতা দেবীর পিতা বিশিষ্ট লেখক মনিশ ঘটক।মনিশ ঘটক ১৯০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি ও উপন্যাসিক সমাজকর্মী ছিলেন। মনিশ ঘটক ১৯৭৯ সালে বহরম পুরে মৃত্যুবরণ করেন।মাতা ধরিত্রী দেবী লেখিকা ও সমাজকর্মী।চাচা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক ও মামা ভারতের ইকোনোমিক এ এন্ড পলেটিক্যাল উইকলির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শচীন চৌধুরী ও অপর মামা ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী।
লেখাপড়া প্রাথমিক ঢাকায় ইডেন মন্তেশ্বরী স্কুলে।আই,এ, বিজয়নগর কলেজ।পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি,এ (সন্মান) ১৯৪৬সন।ইংরেজি ১৯৪৭এম,এ,ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৪ সালে বিজয়নগর জ্যোতিষ রায় কলেজে ইংরেজি অধ্যাপক হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন ১৯৮৪ সালে সমাজ সেবায় অধিক কর্মব্যস্ততার জন্য স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
মহাশ্বেতা দেবী ১৯৪৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেন।বিজন ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশন আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
আরও পড়ুন:সব দলের দেখা শেষ এবার জামায়াতে ইসলামীর হবে বাংলাদেশ
১৯৪৮ সনেএক ছেলে জন্ম গ্রহণ করে।নাম নবারুণ ভট্টাচার্য। নবারুণ ভট্টাচার্য উপন্যাস এবং রাজনৈতিক সমালোচক তিনি চাকরি করতেন সরকারি পোস্ট অফিসে। ১৯৬২ সালে বিজন ভট্টাচার্য ও মহাশ্বেতা দেবীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
এরপর মহাশ্বেতা দেবী সেই সময়ের জনপ্রিয় লেখক অসিত গুপ্ত কে বিয়ে করেন।কিন্তু ১৯৭৬ সালে অসিত গুপ্তের সঙ্গে ও লেখিকার দ্বিতীয় সংসারেরও অবসান ঘটে।
নারী মুক্তি আন্দোলন তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিমবাংলার অবহেলিত আদিবাসী এবং নির্যাতিত নারীদের উপর সমাজসেবার কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গের জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে আন্দোলনকারী বিজ্ঞজন দের মধ্যে তিনি প্রথম সারিতে ছিলেন।
সাহিত্য সাধনা লেখনি জীবনে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন তন্মধ্যে হাজার চুরাশির মা বাজারে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অন্যতম উপন্যাস।তার লেখা প্রথম জীবনী গ্রন্থ ঝাঁসির রানী১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়। তার ঐতিহাসিক উপন্যাস আধার মানিক ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয়। তিতুমীর (১৯৮৪)কৈবর্ত খা(১৯৯৪) দ্রৌপদী,জাতুধান, শিকার,শিশু,সাগোয়ানা,লাইফার, মাছ,ভিশন,প্রভৃতি সাহিত্য রচনা করেন।
সাহিত্য সাধনা ১৯৭৯সালে অরণ্যের অধিকার বাংলা উপন্যাসের জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে সমাজ কর্মের জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।
১৯৯৬ সালে ভারতীয় সাহিত্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার৷ জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭ সালে সাংবাদিকতায় মেগসেস পুরস্কার লাভ করেন ১৯৯৮ সালে বোম্বে এশিয়াটিক পুরস্কার পান।
২০১৬ সালে ২৩ জুলাই মহাশ্বেতা দেবী একটি বড় হার্ট এটাকে শিকার হন।কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হয়।এখানে ২০১৬ সালের ২০ জুলাই ৯০ বছর বয়সে ডায়াবেটিস ও সেপসিস রোগে এই কিংবদন্তি লেখিকা মারা যান।তার মৃত্যুতে শোক জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।