দক্ষিণাঞ্চলীয় থাইল্যান্ডে ২০ বছর আগে ৮৫ জন মুসলিম বিক্ষোভকারীকে হত্যার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী পাইটংটার্ন সিনাওয়াত্রা।
গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে যা ঘটেছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি।’
২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর থাইল্যান্ডের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাক বাইতে এ নৃশংস হত্যাকা- সংঘটিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার শাসনামলে আন্দোলনরত মুসলিমদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রথমে থানার বাইরে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হন। পরবর্তীতে আটককৃত ৭৮ জনকে হাত-পা বেঁধে সামরিক ট্রাকের পেছনে ঠাসাঠাসি করে নেওয়ার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। ‘তাক বাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত এই ঘটনাটি তৎকালীন সময়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় তুলেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বিগত দুই দশকেও এই নৃশংস হত্যাকা-ের জন্য একজন ব্যক্তিকেও দায়ী করা সম্ভব হয়নি। গত দুই মাসে দুই দফায় অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
আগস্ট মাসে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতাসহ সাতজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে আদালত। কিন্তু অভিযুক্তদের কেউই শুনানিতে হাজির হননি। গত মাসে আরো আটজনের বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেন থাইল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। আদালত সকল অভিযুক্তদের আগামী শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও দেশটির আইন অনুযায়ী মামলার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকায় বাস্তবে তা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
ফলে দীর্ঘ সময় পর যখন এই গণহত্যার বিচারের একটি প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়েছে, ঠিক তখনই আইনের এই জটিলতার কারণে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আশাহত।
এ ব্যাপারে থাই প্রধানমন্ত্রী পাইটংটার্ন সিনাওয়াত্রা বলেছেন, ‘বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করা উচিত হবে না। এবং সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটিয়ে এর সীমা বাড়ানো ঠিক হবে না’।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগীদের পরিবারের আইনজীবী রাতসাদা মনুরতসাদা বলেন, ‘যদিও মামলার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ইতিহাস ও স্মৃতির কোনো শেষ নেই। এই পরিবারগুলো কখনোই ভুলবে না যে, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি’।
জাতিসংঘও এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘এ গণহত্যার তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়ে থাইল্যান্ড স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।’
সূত্র : রয়টার্স।