আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি-সচিবসহ অনেকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে জোর তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই তদন্তে নাম আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসেরও।
তাপসের নামে ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে বলে জানতে পেরেছে দুদক। তাদের এক গোপন অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এবার কমিশনের বিশেষ একটি দল এ বিষয়ে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, দুদকের গোপন অনুসন্ধানে তাপসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকাশ্য অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হদিস পাওয়া যাবে।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, সাবেক মেয়র তাপসের গোপালগঞ্জে মাছের খামার রয়েছে। আদতে দেখা যায় সেসবের কোনো অস্তিস্ব নেই। সেই অস্তিত্বহীন মাছের খামার দেখিয়ে মুনাফা হিসেবে ৩৫ কোটি টাকা উল্লেখ করেছেন তাপস। পরে তিনি এ টাকার মধ্য থেকে ৩২ কোটি টাকায় মধুমিতা ব্যাংকের শেয়ার কেনেন। তিনি এ ব্যাংকের পরিচালক। আর ওই ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
দুদক জানায়, ঢাকার কামরাঙ্গীচর এলাকার প্রায় ৩০০টি বাড়ি কোথাও পূর্ণ, কোথাও আংশিক দখল করেছেন সাবেক মেয়র। এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান ও মো. জাহাঙ্গীর তাকে সহায়তা করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সাবেক একজন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষার দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। বিষয়টি সামনে এনে সাবেক মেয়র ডিএসসিসির ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেট ও দলীয় লোকজনের প্রভাবে কামরাঙ্গীচরের কাঁচা, আধাপাকা ও ছোট ছোট পাকা প্রায় ৩০০টি বাড়ি কোথাও আংশিকভাবে, কোথাও পূর্ণ বাড়ি দখল করে নেন।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৩ আগস্ট ভোরে অনেকটা গোপনে দেশ ছাড়েন তাপস।
২০২৩ সালে ১০০ কোটি টাকার মানহানির ক্ষতিপূরণ চেয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন ব্যারিস্টার তাপস। সে বছর ১৩ মে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি রম্য রচনায় মানহানি হয়েছে দাবি করে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই মেয়র। পত্রিকাটির সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ তিনজনকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে ১০০ কোটি টাকা দামের মেয়র সম্বোধন করা হতো।