নিজেকে বাঁচাতে জীবনবাজি রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। ভয় ছিনতাই আর ডাকাতির। দিনের আলোতেও যা ঘটছে অহরহ। যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরও কাটছে না আতঙ্ক। তাহলে কি চুরি-ছিনতাইয়ের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকা?
আগস্টের মাঝামাঝি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে হাসপাতালে ২৭ দিন কাটিয়েছেন গোলাম কিবরিয়া বাবু নামে ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা। এতে চাকরিটিও হারাতে হয়েছে তাকে।
গোলাম কিবরিয়া বাবু সময় সংবাদকে বলেন,
প্রথমে আমাকে আঘাত করার পর হাত দিয়ে ঠেকিয়েছি। তারপর এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। আমার মাথায় ৪টা কোপ পড়েছিল। সেই সঙ্গে পাইপ দিয়ে আঘাত করা হয়। পায়ে ও পিঠেও কোপ আছে।
গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজধানীর ৫০টি থানার প্রায় দেড়শ স্পটে ছিনতাই এখন নিয়মিত ঘটনা। পুলিশের সেপ্টেম্বরের তালিকায় ঢাকায় ছিনতাকারী ও ডাকাতের সংখ্যা ছয় হাজার দুশর মতো।
সম্প্রতি দেখা যায়, সন্ধ্যা, রাত কিংবা ভোর, এমনকি ভর দুপুরেও প্রকাশ্যে হচ্ছে ছিনতাই। অস্ত্রের মুখে, অল্প বয়সি কিশোরদের কাছে ধরাশায়ী হচ্ছেন যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে আহতের ঘটনার সঙ্গে প্রাণহানিও নেহায়েত কম নয়।
নগরবাসীর অভিযোগ, আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ফুলেফেঁপে ওঠেছে অপরাধীরা। ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বেশির ভাগই আবার কিশোর বয়সি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ দমনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। কিন্তু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন সময় সংবাদকে বলেন,
নতুন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে তারা নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারলে কিশোর গ্যাংকে কাজে লাগাবে। তাই কিশোর গ্যাং বন্ধে তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ হতে হবে মধ্যমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি।
শুধু ঢাকা নয়, গোটা দেশে ছিনতাই ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে থানাগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। চলছে যৌথ বাহিনীর ব্লক রেইড। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে তারা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন,
যেসব কিশোর গ্যাং রয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করছি। আমাদের সঙ্গে যৌথ বাহিনী কাজ করছে।
এছাড়া, এলাকাভিত্তিক টহলের সংখ্যা বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।