মাসুদ সরকার, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি।।
পরিচয়ঃ
মোছাম্মৎ ফাতেমা তুজ জোহরা। পিতা ডাক্তার সৈয়দ ফরিদ উদ্দিন। ফরিদ উদ্দিন রাজশাহী বেতারের রবীন্দ্র সংগীতের শিল্পী ছিলেন। মেয়ে নাজিয়া বিষ্কাত তমা। তমাও একজন ভালো সঙ্গীত শিল্পী।
লেখাপড়াঃ
ফাতেমাতুজ জোহরার স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে প্রথমে লেখাপড়া করেন। তারপর তিনি জয়পুরহাটের স্থানীয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করেন।
সংগীত ভুবনে পদার্পণঃ
ফাতেমা তুজ জোহরা ১৯৬৩ সালে প্রথম সংগীত চর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ হাবিবুর রহমান সাথী নিকট সাথীর নিকট এই তালিম গ্রহণ অব্যাহত রাখেন ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত।
অন্যান্য ওস্তাদঃ
এরপর তিনি ওস্তাদ মিঠুনদের নিকট সংগীতের তালিম নেন। এরপর ওস্তাদ নগেন ঘোষ ও ওস্তাদ রফিকুল আলম এর কাছে সংগীতের তালিম নেন।
একক অ্যালবাম প্রকাশঃ
প্রথম এলবাম প্রকাশ ২০০৮ সালে। ফাতেমা তুজ জোহরার প্রথম আধুনিক গানের একক অ্যালবাম “রূপের বাজার” প্রকাশ করেন। কন্যা নাজিয়া বিস্কাত তমার সাথে যৌথভাবে মিশ্র এলবাম “প্রথম প্রদীপ জ্বালো” প্রকাশ করেন। এলবাম গুলি শ্রোতাদের নিকট জনপ্রিয়তা পায়।
কুমিল্লা টাউন হলেঃ
২০১৬ সালে ২৭ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা টাউন হলের অনুষ্ঠানে ফাতেমা তুজ জোহরা একাই ১৫ টি নজরুল সংগীত একটানা পরিবেশন করেন।
সাহিত্য সাধনাঃ
১৯৯২ সালে তার প্রথম কবিতার বই “যেখানে ভালো বাসার বাস” বিউটি বুক হাউস প্রকাশ করে। ছড়ার উপর তার প্রথম বই “তালবাহারি ছড়া” দ্বিতীয় বই ছড়াই গড়ো বল” বইটি শিশু একাডেমী প্রকাশ করে” শব্দ ঘর পত্রিকায় লেখা গল্প গুলি নিয়ে গল্পের বই “কিছু কথা” প্রকাশিত হয়।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর একটি উপন্যাস রচনা করেন। “গীত ও সুরের ভিন্ন উর্মি মালা” “কিছু নিয়ে কিছু কথা” বইগুলি অনিন্দ্য প্রকাশ নামক একটি প্রকাশনা সংস্থা আলোর মুখ দেখান। বইগুলি পাঠক প্রিয়তা পায়।
অভিনয়।
সু কন্ঠে অধিকারী শিল্পী ফাতেমা তু জোহরা গানের পাশাপাশি অভিনয়েও দক্ষ ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ক্ষ,ম হারুন পরিচালিত নাটক “লাগুক দলায়” বোবা মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। অতপর কাজী নজরুল ইসলামের “শিউলি মালা” নাটকে অভিনয় করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে নাটক”শেষের রাত্রি”২০১২ ও “ঘাটের কথা” ২০১৭ সালে সুনিপুণভাবে অভিনয় করে অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য ছোট বড় অনেকগুলি পুরস্কার অর্জন করেন।
তন্মধ্যে সংগীতে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও প্রেসক্লাব পুরস্কার, নজরুল একাডেমী পুরস্কার, থিয়েটার সম্মাননা পুরস্কার, স্বাধীনতা ফোরামের সম্মাননা পুরস্কার, শেরেবাংলা সম্মাননা পদক লাভ করেন।
শিল্পীর গাওয়া জনপ্রিয় গানঃ
(১) মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দিব খোপায় তারার।
(২) দুর দ্বীপ বাসিনী চিনি তোমারে চিনি দারুচিনির।
(৩) পাষাণে ভাঙ্গালে ঘুম কে তুমি সোনার ছোয়ায়।
(৪) সবার কথা কইলে কবি এবার নিজের কথা কও। (৫) আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় মনে পড়ে মোরে
(৬) শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে নয়নে বারি।
(৭) হারানো হিয়ায় নিকুঞ্জপথে কুড়ায় ঝরা ফুল একে
(৮) তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপ।
(৯) আলগা করো গো খোপার বাঁধন দিল ওহি মেরা।
(১০)পদ্মা ঢেউড়ি মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে।
(১১) মুসাফির মোসরে আখি জল ফিরে চল আপনারে
(১২) চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিস রে চোখ গেল।
(১৩) পাষাণের বাঙালি ঘুম কে তুমি সোনার ছোয়ায়।
গ্রন্থঃ বরেন্দ্র ভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৩৯
লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু।