Homeঅর্থনীতিবাংলাদেশের কী লাগবে জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের কী লাগবে জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে টাকার অঙ্ক তুলে ধরেছে। আলটিমেটলি তারা কতো টাকা দেবে তা বিশ্বব্যাংক তাদের বোর্ডে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। তবে নতুন বাংলাদেশ গড়তে অর্থ চাওয়ার অঙ্ক শুনে বিশ্বব্যাংক আঁতকে ওঠেনি। এমনকি প্রত্যেকটা মিটিংয়ে বিশ্বব্যাংক জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের কী লাগবে?

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলনের ২য় দিন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে সালেউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে আইএমএফ’র এমডি বার বার বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বৈঠকে আইএমএফ এমডি ক্রিস্টালিনা গিওরগিভা সামষ্টিক অর্থনীতি এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছেন। সরকারের পাশে থাকবে উন্নয়ন সহযোগীরা, সেই প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে নব্বই পরবর্তী সব সরকারই এই কৃতিত্বের দাবিদার বলে মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের বৈঠকে নিজস্ব কৌশল তুলে ধরেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ইউএসএআইডি’র সঙ্গে কথা বলবো, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবো এবং আরও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলবো। মোদ্দা কথা হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে মোটাদাগে আর্থিক সহায়তা চাইবো।

যেসব ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক খাত উন্নয়নে সহায়তা ও বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা বিশ্বব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ চাইবে। এ ছাড়া পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে সহায়তা চাওয়া হবে। ব্যাংক সংস্কারের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হবে। ব্যক্তিখাতের উন্নয়নের জন্য আমরা সহায়তা চাইবো।

আর একটা হলো টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা সহায়তা চেয়েছি। মোটামুটি একদম সন্তোষজনক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বাংলাদেশ।

ঋণ পরিশোধ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ঋণ পরিষদে ব্যর্থ হয়নি। বৈঠকে আইএমএফ বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়েছে।

বাংলাদেশ কতো টাকা ঋণ সহায়তা পেতে যাচ্ছে, জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা টাকার অঙ্ক তাদের কাছে তুলে ধরেছি। আলটিমেটলি তারা কতো টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক তাদের বোর্ডে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। তবে নতুন বাংলাদেশ গড়তে অর্থ চাওয়ার অঙ্ক শুনে বিশ্বব্যাংক আঁতকে ওঠেনি। নতুন বাংলাদেশ গঠনে যার যার কাছে যত টাকা চেয়েছি প্রত্যেকে পজেটিভ এবং সন্তোষজনক সাড়া দিয়েছে। তবে সহায়তার পরিমাণটা পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলনের ২য় দিনে বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে আইএমএফ। এতে বাংলাদেশের জন্য চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এ ব্যাপারে দুর্যোগপ্রবণ ২০ দেশের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই অধোগতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় সরকার। বরং ধাক্কা সামলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা তার কথায়।
একই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে ঠিক কি পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে, শিগগিরই তার হিসাব জানা যাবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী মনে করছেন, সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যেকোনো পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশের পূর্বাভাস: অর্থনীতির ধীর গতির কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর আগে চলতি অর্থবছরের জন্য সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ৬.৬ শতাংশ।
ওয়াশিংটনে সংস্থাটির সদর দপ্তরে চলমান বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত আইএমএফ’র ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ রিপোর্টে এ পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যা এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। আইএমএফ’র ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ রিপোর্টে অবশ্য বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আলাদা পর্যালোচনা নেই।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসার পূর্বাভাস থাকলেও আইএমএফ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি না কমে বরং বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯.৭ শতাংশ।

আইএমএফ’র অনুমান, চলতি অর্থবছরে বেড়ে ১০.৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলেছিল, খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে চলতি অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকবে। তবে তা গত অর্থবছরের ৯.৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামতে পারে।

আইএমএফ প্রতি বছর এপ্রিলে এবং অক্টোবরে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রকাশ করে।
এই রিপোর্টে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দেশভিত্তিক সর্বশেষ হিসাব এবং আগামীর জন্য পূর্বাভাস থাকে। মূলত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র বসন্তকালীন সভা এবং বার্ষিক সভায় এই ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এখন ওয়াশিংটনে সংস্থা দু’টির বার্ষিক সভা চলছে। বাংলাদেশ আইএমএফ’র কাছ থেকে বাড়তি যে ঋণ চেয়েছে, সে বিষয়ে এই সভা চলকালীন আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর