আশরাফুল, কয়রা প্রতিনিধি।।
শুনলাম মানষে কইতাছে আবার নাকি (দানা) নামের ঝড় আসপে আমাগের দিকে। কমলা রঙের জামা গায় একদল ছেমড়ারা (সিপিপি) মোড়ে মোড়ে রাঙা পতাকা বানতেছে লর লাঠির মাথায়। আর হাতে মাইকে কয়ে গেল সাবধান থাকতি হবে ঝড় আইতাছে। আমাগের আর সাবধানের কি আছে। ঝড় আসলি আর নদীর পানি বাড়লি তো ওয়াপদা (বেঁড়িবাঁধ) ভাঙবে। আর ওয়াপদা (বাঁধ) ভাঙলি তো ঘরদোর সব লোনা জলে ভাসাই নেবে। ঘর ভাঙলি রাতি দিনি থাকতি যে কত কষ্ট হয় তা বুঝবে কেডা। প্রত্যেক এপ্রিল, মে, অক্টোবর ও নভেম্বর এই সময়ডা আসলি ভয়তে থাকতি হয় এই বুঝি সংকেত আইলো। সংকেত শুনলি ভয় লাগে, ঝড়ে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে ঘর ভাঙলি থাকব কোথায়।’
গত আইলা থেকে শুরু করে ঝড়গুলোর মধ্যে আইলাসহ আম্পান, ইয়াস, বুলবুলে পাঁচবার ঘর ভেঙেছে। নিজস্ব বসতবাড়ি সব এই নদীর ওই পারে। নদী এখন আমার জমিতে। অনেক কষ্টে না খেয়ে তা সামাল দিয়ে নতুন করে ঘর তুলে বাঁধের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। আবারও ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত শুনে আতঙ্কে আছেন কয়রার নদী পারের জনগন।
কয়রায় বেড়ীবাঁধের পাশে বসাবসরত রহিমা বেগম বলেন, আমাদের রাস্তা বাঁধের ওপর। ঘূর্ণিঝড় যদি প্রবল হয়, তাহলে রাস্তা ভেঙে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেলে আমরা বিপদগ্রস্থ হয়ে যাব, শুনেছি ৩ নম্বর সংকেত। এখন ভাটা চলছে, অথচ জল নামছে না। এখনো নদীতে জল রয়েছে। জোয়ার এলে জল তো আরও বাড়বে। এই জল দেখে বুক কাঁপে। কারণ গত কয়েক মাস আগে ঝড়ে তিনটি ঘর ভেঙে যায়। এবারও ভয় লাগছে রাস্তা ভেঙে না আবার বাড়ি ঘর তলিয়ে যায়। গত কয়েক মাস আগে ভাঙা বেঁড়িবাঁধে বালুর বস্তার উপর মাটির দেয়াল দেওয়া হয়েছিল। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সেখানে পরিদর্শন করে বাঁধ উচু করে মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু সেখানে আর কাজ হয়নি। আবার আরও ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধটি।
উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অসংখ্য মানুষ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বিশেষ করে জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ বেঁড়িবাঁধ নিয়েই তাদের উৎকন্ঠা বেশি।
কপোতাক্ষের নদের তীরে মদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় আজ(বুধবার) দুপুরে। তারা জানান, আগে ভরা জোয়ারেও এলাকার বেঁড়িবাঁধের অর্ধেক পর্যন্ত পানি থাকত। এখন বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়। আর ঘূর্ণিঝড় হলে নদের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়বে, তখন ছাপেিয় লোকালয় লোনাপানিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে। সে জন্য আপাতত বাড়িঘর রশি বেঁধে মজবুত করার চেষ্টা করছেন তারা।
বুধবার সকালে কয়রা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না বলেন, দানা ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় রুপ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে। তবে যদি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মধ্যরাতে হয় তাহলে বিপদ বেশি। তখন নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উঁচু জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। কয়রা উপজেলা এখনো ৩ নম্বর সংকেতের আওতায় আছে।
সার্বিক বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস জানান, সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা দূর্যোগকালীন ক্ষতিগ্রস্থদের খাদ্য, পানীয় ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক পনিস্থিতি মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরাও যেন নিরাপদে ফিরে আসেন, সে জন্য মৎস্যজীবী সমিতির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।