ফরিদপুরের সালথা উপজেলা বিএনপি নেতা খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন এলাকাবাসী। অভিযুক্ত খায়রুল বাসার আজাদ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
গত ১৪ অক্টোবর উপজেলার জয়ঝাপ ইমামবাড়ি মেলায় এক তরুণীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় কাসেম বেপারী নামের এক যুবক খুন হন।
এ ঘটনার মামলাকে পুঁজি করে আজাদ ও তার ভায়রা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ মাতুব্বর, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরু মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিক মাতুব্বর, গ্রাম্য মোড়ল হিরু মোল্যা, হাসান বেপারীসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওই খুনের ঘটনায় মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সালথার ব্যবসায়ী মুসা তালুকদারের কাছ থেকে ১৩ লাখ, বালিয়ার শাহজাহান মাতুব্বরের কাছ থেকে ৩ লাখ, হাফিজুর মাতুব্বরের কাছ থেকে ২ লাখ, ওমর মাতুব্বরের কাছ থেকে ১ লাখ ও সবুর খাঁর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন আজাদ ও তার বাহিনী। এ ছাড়া গভীর রাতে বালিয়া বাজারের মুসা তালুকারের সারের দোকানের ৩টি গোডাউন থেকে কোটি টাকার মালামাল ও নান্নু মাতুব্বরের দোকান থেকে নগদ ৭ লাখ টাকাসহ ৪৯ লাখ টাকার মালামাল লুট করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নান্নু মাতুব্বরের মা ফরিদা বেগম। সে মামলায় প্রধান আসামি করা হয় খায়রুল বাসার আজাদকে।
থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে নিজের কব্জায় নেওয়ার চেষ্টায়ও মেতে উঠেন তিনি। নিজের কব্জায় নিয়ে এলাকাবাসীকে থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে এসব করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তার চাঁদাবাজির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারাও। সালথা থানার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা।
আওয়ামী সরকারের টানা ১৬ বছরের শাসন আমলে বিএনপির কোনো দলীয় কার্যক্রমে ছিলেন না আজাদ। বরং আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে নিজ দলীয় কর্মসূচি ও দলীয় কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত করে আসছিলেন তিনি। অথচ সেই আজাদ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ত্রাসের রাজত্ব। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
আজাদের এসব অপকর্ম, চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট ও সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনায় একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দল ক্ষমতায় আসার আগেই আজাদের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে দল যদি প্রশ্রয় দেয় তাহলে সালথা উপজেলা বিএনপির ভালো অর্জনগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাবে বলে মনে করেন খোদ বিএনপিরই স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদ বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।’
সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, গট্টি ইউনিয়নে অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিএনপির সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বলে শুনেছেন তিনি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরও যাচাই বাছাই করে দেখা হবে সালথায় চাঁদাবাজির সঙ্গে বিএনপির কে কে জড়িত। বিষয়টি দলের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে।’
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, সালথায় একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি নেতা আজাদকে প্রধান আসামি করে ২৯ জনের একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত আছে।