ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যটির জিরিবাম জেলায় মেইতেই এবং কুকি বাহিনীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। হামলা হয়েছে জিরিবাম জেলার একটি থানায়ও।
এছাড়া একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বোমা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা মণিপুরের জিরিবাম জেলার একটি থানায় ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেছে বলে জেলার বোরোবেকরা মহকুমার পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা জিরিবাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বোরোবেকরা থানায় ভোর সাড়ে ৫টায় গুলি চালাতে শুরু করে।
হামলার পর সামনে আসা ছবিতে থানার দেওয়াল ও দরজায় বুলেটের ছিদ্র দেখা যায়। হামলার সময় একটানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সূত্র জানায়, হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী চিরুনি অভিযান শুরু করে।
এছাড়া একটি বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে এবং অন্তত একটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
মণিপুরের পুলিশ প্রধান রাজীব সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, “জিরিবাম জেলাসহ কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাস খানেকের বিরতির পরে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে মণিপুরের জিরিবাম জেলায়। শনিবার ভোর থেকে মেইতেই এবং কুকি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় গুলির লড়াই হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে জিরিবাম জেলায় দু’গোষ্ঠীর গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জন।
এদিকে রাজ্যটিতে শান্তি ফেরাতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিধায়কদের নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে বৈঠকের আয়োজন করেছে চলতি সপ্তাহে। এরই মধ্যে নতুন করে সংঘাত ছড়াল উত্তর-পূর্বের বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে।
মূলত ২০২৩ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল।
এরপরেই জনজাতি সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।
মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।