অদিতি সরকার। মাত্র ২০ বছরে বয়সেই কানাডার আকাশে পাইলট হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন এ বাংলাদেশের এ তরুণী।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী পাথুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী অপূর্ব সরকার ও মাহবুবা সরকার দম্পতির ৩ মেয়ের মধ্যে অদিতি সরকার সবার বড়।
প্রথম শ্রেণী থেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত জয়পুরহাট শহরের জামান মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড একাডেমিতে শৈশব কাটলেও কার্শিয়াং দার্জিলিংয়ের হিমালী বোডিং ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
এরপর কলকাতার জেমস একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৯ম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এবং সেখানেই ও লেভেল সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকার লাল মাটিয়ার লরেট স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং এ লেভেল সম্পন্ন করেন।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কানাডার ভেনকোভার প্রিন্সিপাল এয়ার ফ্লাইং স্কুল থেকে পাইলট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সেখানেই ইন্সটেকটরের রেটিং করে ৩ বছর পাইলট প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করার পর ফার্স্ট অফিসার পদে পাইলট হিসেবে যোগদান করেন।
এরআগে, প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় হঠাৎ করেই বাংলাদেশ থেকে খবর যায়-তার বাবা আর বেঁচে নেই। এ অবস্থায় নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে মাসহ নিকট আত্মীয়দের উৎসাহে খণ্ডকালীন চাকরি করেই তিনি বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। এ জন্য অদিতি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
অদিতির মা মাহবুবা সরকার বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার মেয়ে যখন কানাডায় অবস্থান করে পুরোদমে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে তার স্বপ্ন দেখানো সমাজকর্মী বাবা অপূর্ব সরকার ইহলোক ত্যাগ করেন। ওই সময় আমি নানান প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে মেয়ের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে লড়ে গেছি। এ জন্য সমাজের প্রতি আমার ম্যাসেজ, শত বাধা পেরিয়ে মেয়েরাও পারে আকাশ ছুঁতে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমার মেয়ে।
তার সাফল্যে ছোট বোন অরণি বলেন, লেখাপড়া শেষে কারও মতো যদি হতে চাই, তাহলে সবার আগে আমার বোন অদিতি আপুর মতো হবো। আমি তাকে ফলো করি।
অদিতির এ সাফল্যে শুধু পাথুরিয়া গ্রামের মানুষই নয়-পুরো জয়পুরহাট জেলাবাসী খুশি। খুশি পুরো বাংলাদেশ। জয়পুরহাটের নিভৃত পল্লী থেকে বেড়ে ওঠা মেয়ে অদিতি আজ বিদেশের আকাশে বিমান নিয়ে ঘুরছেন- এটা ভাবতেও অবাক লাগে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও ছোট বেলার সেই স্কুল শিক্ষকদের।
অদিতির ছোট বেলার বিদ্যালয় জামান মডেল স্কুল এন্ড একাডেমির পরিচালক মোছা. গুলশান আরা জামান অনেকটা দরদ মাখা কণ্ঠে বলেন, ‘অদিতি ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। সেই সঙ্গে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি-মনাও ছিল। আমরা তার এমন সাফল্যে আনন্দিত এবং গর্বিত।
প্রসঙ্গত, অপূর্ব সরকার ও মাহবুবা সরকার দম্পতির ৩ মেয়ের মধ্যে ২য় মেয়ে অর্থী দেশের বাইরে জর্জিয়াতে মেডিকেলে পড়ছেন এবং ছোট মেয়ে অরণি ভারতের শিলিগুড়িতে এ লেভেলের শিক্ষার্থী।