রবিউল ইসলাম খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরের ফাতেহা বেগম ময়না একজন গৃহিণী ও সফল নারী উদ্যোক্তা। ইংরেজীতে স্নাতক শেষে দুই বোন ও স্বামীর উৎসাহে সংসার সামলিয়ে লক্ষ্মীপুর শহরের ৬নং ওয়ার্ড শিল্পী কলোনী মোড়ে গড়ে তোলেন ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান পোষাক ঘর। লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁর যাত্রা ছিল অদম্য। অক্লান্ত পরিশ্রম এনে দিয়েছে তাঁকে সাফল্য। সাফল্যের সে গল্প নিয়ে কথা বলেছেন ফাতেহা বেগম ময়না।
লক্ষ্মীপুরে তার জন্ম হলেও বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা সবকিছুই হয়েছে বন্দর নগরী চট্রগ্রামে। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজীতে অনার্স, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন টেকনোলজী থেকে ডিপ্লোমা কোর্স, কম্পিউটার অফিস প্রোগ্রাম কোর্সসহ মোম, চানাচুর তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করতে হবে এটাই ছিল তার লক্ষ্য। ২০১৫ সালে বিয়ের পর চট্টগ্রাম থেকে স্বপরিবারে লক্ষ্মীপুর চলে আসেন তিনি। পরে লক্ষ্মীপুর পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করার প্রবল আগ্রহে শহরের শিল্পী কলোনী মোড়ে গড়ে তোলেন ‘পোষাক ঘর’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
পোষাক ঘর তৈরিতে তিনি অনুপ্রেরণা পান দুই বোন ও তার স্বামীর কাছ থেকে। ছাত্রজীবনে আড়ং কোম্পানীতে সেলসম্যান হিসেবে চাকুরী করার সুবাধে ক্রেতা সম্পর্কে ধারণা সেখান থেকেই তার সৃষ্টি হয়। বাস্তবতার নিরিখে বাজার চাহিদা ও শহরে মানুষের রুচি ও ফ্যাশন সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি। এরপর স্বপ্ন দেখেন প্রতিষ্ঠান গড়ার। তার এ প্রতিষ্ঠানে স্কুল কলেজের মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি অবসর সময়ে কাজ শিখছেন এবং অর্থ উপার্জন করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। তার এ প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারী মহিলা ফ্যাশন ডিজাইনার দ্বারা জামা কাপড়ের ডিজাইন ও সেলাই করা হয়। তার এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ মহিলা দ্বারা পরিচালিত হয়। বর্তমানে তার এ প্রতিষ্ঠানে চারজন কাজ করছেন। প্রতি মাসে তার আয় হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে রঙ ও বৈচিত্র্যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে পোষাক তৈরির বিভিন্ন ডাইস লক্ষ্মীপুরে না থাকায় কাজে খুব বেগ পাওয়ার কথা জানান তিনি। এছাড়া বুটিকের বিভিন্ন মেডিসিন ঢাকা থেকে আনতে হলে যাতায়াত খরচ দিয়ে ব্যবসা করা কষ্টসাধ্য।
এদিকে ময়না আক্ষেপ করে বলেন, মফস্বলে মানুষের মন মানসিকতা এখনো পাল্টায়নি। রীতিমত দোকানে এসে প্রশ্ন করে, কলেজে চাকুরী করেন পাশাপাশি এটা কেন ? এত টাকা কি করবেন ? আরো কত কি। বাচ্চারা যেমন মায়েদের আঁচল ধরে পেছন দিকে টানে আমাদের সমাজের পুরুষেরা নানা কটুক্তি করে নারীদের ব্যবসায় নিরুৎসাহিত করে পেছনের দিকে টানতে চায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রেতাদের পছন্দের সেরাটাই দোকানে রাখতে চান তিনি।
তিনি মনে করেন, স্টাইলটা সম্পূর্ণ নিজের। শখ এবং সাধ্যের মধ্যে যাতে গ্রাহক কেনাকাটা করতে পারে সেদিকে ময়না লক্ষ্য রাখেন।
ব্যবসায় সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে ময়না জানান, ব্যবসার শুরুতে তার দুই বোন, তাদের জামাতা ও তার স্বামী রাজু আহম্মেদ এবং লাইবেরিয়া প্রবাসী তার ভাই অর্থের যোগান দেন। তার বড় বোন মমতাজ বেগম লক্ষ্মীপুর পেীরসভার বাজার পরিদর্শক হিসেবে চাকুরী করেন। মেজ বোন রাবেয়া সুলতানা কমলনগর রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবীশ হিসেবে আছেন। সন্ধ্যায় তার দুই বোন প্রতিষ্ঠানে সময় দেন। এক বোন বুটিকের কাজে ও অন্যজন অ্যাম্ব্রয়ডারি ও পাঞ্জাবির গলার কাজে তাকে সহযোগিতা করেন।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাকে বিচক্ষণ হতে হয়। সংসার, সন্তানকে দেখাশোনার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খেয়াল রাখতে হয়। পরিবারের পাশাপাশি ব্যবসার প্রতিও আন্তরিক হওয়ার কথা জানান তিনি। কুসংস্কার আর মানুষের কথাকে ভয় না পেলে শত বাধা সত্ত্বেও সমাজে তিনি সফল হতে পারেন এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলাফেরা ও কাজ করতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।