Homeসর্বশেষ সংবাদসীতাকুণ্ডের এখনো বহাল তবিয়তে সেই সাব-রেজিস্ট্রার, বন্ধ হয়নি ঘুষ লেনদেন

সীতাকুণ্ডের এখনো বহাল তবিয়তে সেই সাব-রেজিস্ট্রার, বন্ধ হয়নি ঘুষ লেনদেন

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।

ঘুষের দায়ে অভিযুক্ত সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।ঘুষ লেনদেনও করেন আগের মতই।

জুলাই বিপ্লবের শুরুতে তার ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ডের দলিল লিখকগণ ফুসে ওঠে। সেসময় নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (আইজিআর), জেলা রেজিস্ট্রার ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

পরে আইজিআর এর নির্দেশে জেলা রেজিষ্টারের হস্তক্ষেপে রায়হান হাবিব আর ঘুষ লেনদেন না করার প্রতিশ্রুতি দিলে তাকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। ৫ আগস্টের পর দেশজুড়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সংশোধন হলেও ঘুষ লেনদেন থেকে এক চুলও সরে আসেননি সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব। নানা চল ছুতোই তিনি ঘুষের হার বাড়িয়ে দিয়েছেন আগের চেয়ে দ্বিগুণ।

সোমবার ৭ অক্টোবর দুপুরে দলিল লিখক হারুন অর রশিদ ওয়ারিশ সূত্রে একখানা দলিল উপস্থাপন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তাকে খাস কামরায় ডেকে নেন। এ সময় হারুনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। হারুন অপরাগত প্রকাশ করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার সাথে অশালীন আচরণ করেন এবং তার সনদ বাতিলের হুমকি দেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দলিল লিখকরা। পরিস্থিতি শান্ত করতে দলিল লিখক সমিতিতে হারুনকে ডেকে ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন সমিতির নেতারা।

এদিকে খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে স্থানীয় সাংবাদিক ফারহান সিদ্দিক ও আব্দুল মামুন সাব-রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় গিয়ে তার বক্তব্য চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তাদের “গেট আউট” বলে চিৎকার বের করে দেন। একজন সরকারী কর্মকর্তার এমন অসৌজন্যমূলক আচরণে উপস্থিত সাংবাদিক ও সেবাগ্রহীতাগন হতভম্ব হয়ে পড়েন।

তবে রায়হান হাবিবের ঘুষদাবি কিংবা ক্ষিপ্ত আচরণ এবারই প্রথম নয়। একবার চাহিদা মত ঘুষ আদায় করতে না পারায় তার অফিসের বয়োবৃদ্ধ কর্মচারীর ওপর চড়াও হন তিনি।

দলিল লিখকগণ জানান, গত জুলাই ১ তারিখে সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পর দলিল লিখকগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত ঘুষ না নেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা থেকে সরে আসেন রায়হান হাবিব। এমনকি বর্তমানে ঘুষের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে ঘুষ দাবি মেটাতে না পারায় দলিল নিবন্ধনের পরিমাণ বহুলাংশে কমে গিয়েছে।

দলিল লিখক সমিতির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাব-রেজিস্ট্রার আইন দেখিয়ে ওয়ারিশ সূত্রে দলিলসমূহ সম্পাদন সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন। অথচ চাহিদামত ঘুষ দিলে আবার সে দলিল নিবন্ধন করা হয়। গত এপ্রিলে রায়হান হাবিব যোগদানের পর হতে এমন অসংখ্য দলিল সম্পাদিত হয়েছে।

সীতাকুণ্ড দলিল লিখক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত জুলাইয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের অনুরোধে আমরা কলম বিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করি। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব ঘুষ নেয়া থেকে এক চুলও সরে আসেননি।

একই সাথে তার অশালীন আচরণ চরম আকার ধারণ করেছে। তরুণ থেকে বয়োবৃদ্ধ কেউই তার আক্রমণাত্বক আচরণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে রায়হান হাবিবের অপসারণ দাবি করছি।

দলিল লিখক হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা সবসময়ই সাব-রেজিস্ট্রার এর চাহিদা মত ঘুষ দিয়ে কাজ করতে বাধ্য হই। আজকের দলিলটি আমার এক উকিল বন্ধুর। তাই সাব-রেজিস্ট্রার আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে আমি অপারগতা প্রকাশ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং অনেক লোকের উপস্থিতিতে আমাকে হেনস্থা করেন।

সাংবাদিক ফারহান সিদ্দিক বলেন, এতদিন সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিবের অশালীন আচরণের কথা শুনেছি আজ স্বচক্ষে দেখলাম। সরকারি কর্মকর্তার আচরণ এতটা নিচু মানের হতে পারে তা রায়হান হাবিবকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। গতকাল তার অফিস কর্মচারীরাও তাকে অসৌজন্যমূলক আচরণ থেকে দমাতে পারেনি।

সাব-রেজিস্ট্রার রায়হান হাবিব বলেন, ঘুষ লেনদেন কিংবা দাবির বিষয়টি সত্য নয়। আর আমি কেন আচরণ খারাপ করব বরং দলিল লিখক হারুন অর রশিদ আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। এছাড়া সাংবাদিকদের “গেট আউট” বলে বের করে দিয়েছি কারণ ওই সাংবাদিকগণ হারুন এর পক্ষে কথা বলছিলেন।

জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত না করে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।

প্রসঙ্গত, রায়হান হাবিব এর বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ সীতাকুণ্ডেই প্রথম নয়। এর আগে তার দুই কর্মস্থলেও একই অভিযোগ ওঠে। গত ২৯ জুন ২০২০ সালে কুড়িগ্রামে রাজারহাট উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার থাকাকালীন সেখানকার নির্বাহী অফিসার বরাবর রায়হান হাবীবের বিরুদ্ধে ভুয়া দলিল সম্পাদনের লিখিত অভিযোগ করা হয়। এছাড়া ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার থাকাকালীনও তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অপসারণ দাবি করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

Exit mobile version