জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা কোনো দলের নয়, তারা জাতীয় বীর। এ অভ্যুত্থানে আমাদের কতজন মারা গেছে তা বলব না। শহীদদের টাকা দিয়ে মাপা যাবে না।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কাফরুলের একটি মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বৃহত্তর কাফরুল অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এ সভা করা হয়।
জুলাই অভুত্থানের নিহতদের ব্যাপারে জামায়াত আমির বলেন, যেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেছে, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তবে তা হতে হবে সম্মানের সাথে।
শহীদ পরিবারের অন্তত একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির।
তিনি বলেন, জনতা বর্তমান সরকারকে বসিয়েছে, তাদের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। তারা সফল হলে বিপ্লব সফল হবে।
‘সরকারকে অর্থবহ সহযোগিতা করতে চাই। তাদেরকে শুধু বলব বিপ্লবকে ধারণ করতে হবে,’ বলেন ডা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, যারা জুলুমের সাথে জড়িত ছিল, স্বৈরাশাসকে সহযোগিতা করেছে, তাদের কোনো অধিকার নাই সরকারি চাকরি করার বরং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা রক্ষা পেয়ে গেলে পরবর্তী সরকারও স্বৈরাচার হয়ে উঠবে। আমরা চাই এটাই হবে বাংলাদেশের শেষ অভুত্থান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষকে আমরা মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। দল-ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দরকার। বিভক্ত জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। মূলত, বিভক্ত জাতির জন্য অপমান ও লাঞ্ছনা অনিবার্য। সে ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অপমান ও লাঞ্ছনা চলেছে। যা আর চলতে দেওয়া যায় না বরং তা পাল্টানোর সময় এসে গেছে। আর এজন্য আমাদেরকে অতীত বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। মূলত যে জড়ো সড়ো হয়ে চলে সে নিজের জন্য যেমন বোঝা; ঠিক তেমনিভাবে পরিবার ও সমাজের জন্যও বোঝা। আর যে ব্যক্তি নিজেকে মেলে ধরতে পারে সে নিজের জন্য যেমন এসেট; ঠিক তেমনিভাবে পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্যও এসেট। তাই আমাদের প্রত্যেককেই এসেট হওয়ার শপথ গ্রহণ করতে হবে। তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ ও মূলমন্ত্র। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীরা সবসময় মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য আমরা সব সময়ই আপোষহীন রয়েছি। আমরা আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে চলি। মানুষের মাঝে কুরআন-হাদিসের দাওয়াত দেই আমলী ভাষায়। আর এই দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি আহবান এবং দ্বীনে হক্ব। আমরা চাই আমাদের দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রকৃত ঠিকানা খুঁজে নিক। আমরা কাউকে বোকা মনে করি না বরং তারা দাওয়াত গ্রহণের মাধ্যমে নিজের গন্তব্য ঠিক করে নিতে পারবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’য়ালার মানুষের কর্মের প্রকৃত মালিক। আর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে কর্মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের চেষ্টা করা। তিনি ৫ আগস্টের বিজয়কে অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মো.শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন, মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম,আব্দুল মতিন প্রমূখ।