সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতনের পর আগামী ১৮ মাসের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই দিয়েছে। এর আগে, সোমবার রাজধানী ঢাকায় রয়টার্সকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেন জেনারেল ওয়াকার।
সেই সাক্ষাৎকারে ওয়াকার-উজ-জামান জানান, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি দেওয়ার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন তিনি।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, আমি তার পাশে থাকব, যা-ই হোক না কেন। যাতে তিনি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।
জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং সেনাবাহিনী কোনো বাধা দেয়নি। এতে করেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর স্বৈরাচারী এই শাসক পদত্যাগ করে প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান।
এরপর বৈশ্বিক ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক ড. ইউনূস দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তী সরকারের। তিনি বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন, যাতে করে ১৭ কোটি মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত হয়।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সংস্কারের পর গণতন্ত্রে উত্তরণ এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে করা উচিত। তবে এই সময়ে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।
অবশ্য গত আগস্টে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়ই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানায়।
জেনারেল ওয়াকার বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং তিনি (সেনাপ্রধান) প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অশান্তির পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি তবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তৎকালীন সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নে ও হিংসাত্মক সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন। একপর্যায়ে এই আন্দোলন বিস্তৃত সরকারবিরোধী বিদ্রোহে পরিণত হয়, যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন।