নাটকীয়ভাবে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বামপন্থি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। তিনি তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা এবং ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহেকে ধরাশায়ী করে জয়ী হন।
গতকাল রোববার শ্রীলঙ্কায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার পর তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রথম বামপন্থী হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
গত ২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরেরও বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেলো দেশটি।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দিসানায়েকে। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। আর মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই নতুন মুখ দিসানায়েকে। তার উত্থানের গল্প যেনো রূপকথার মতো। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের চেয়ে নিজেকে ভিন্নমাত্রায় উপস্থাপন করে জনমত আদায়ে সক্ষম হয়েছেন বামপন্থি এই নেতা। ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া দিসানায়েকে ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯৫ সালে জনতা বিমুক্তি পুরামুনার (জেভিপি) পলিটব্যুরোতে যোগ দেন। এরপর ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রী এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তরুণ এই নেতা।
২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৭তম জাতীয় কনভেনশনে জেভিপির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন দিসানায়েকে। দীর্ঘ এই রাজনৈতিক যাত্রা তাকে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে এনপিপি জোটের প্রার্থী ছিলেন জেভিপি প্রধান অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। যদিও জোটটি এর আগে কখনো শ্রীলঙ্কার বিরোধীদলও ছিল না। দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই জোটের আসন ছিল মাত্র তিনটি।
কিন্তু গণবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ওই বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা ছিল দলটির। আন্দোলনের পর জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলটির অনড় অবস্থান নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। তাতে দলের সঙ্গে বেড়েছে দিসানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদনও।
গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত দুটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল জেভিপি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এর চরম প্রতিশোধ নেয়। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দল সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হন। এরমধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর ৫৫ বছর বয়সী দিসানায়েকে জেভিপির পলিটব্যুরো সদস্য হন। দলটিও সহিংসতার পথ থেকে সরে আসে।
বিশ্লেষকদের মতে, দিসানায়েকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে পেরেছেন। এটিই তাকে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নির্বাচিত নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।