সেনাবাহিনীকে যে দুই মাসের জন্য বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পুনঃবিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে জেলা বিএনপির আয়োজনে শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সাথে স্বাক্ষাৎ ও সাহায্যকরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ অনুরোধ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেরিয়াল পাওয়ার দেয়া হয়েছে (বিচারিক ক্ষমতা)। তার মানে এই যে প্রশাসন ল এন্ড অর্ডার মেইন্টেইন করতে পারছে না।
আমি মনে করি সেনাবাহিনীকে মেজিষ্ট্রেসি পাওয়ার সেই সব এলাকাতে দেয়া দরকার যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু যেসব এলাকাগুলো শান্তিপূর্ণ আছে, স্থানীয় রাজনীতিক নেতা কর্মীরা সমস্ত বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেই সব এলাকাতে মেজিষ্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি করা সমীচীন হবে না, বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা।
তিনি বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো তারা বিষয়টি পুন:বিবেচনায় নিবেন এবং তারা কখনোই এমন কোন ব্যবস্থা নিবেন না যা সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের জন্য অসুবিধা হবে। আমি কথাটা স্পষ্ট করে বলছি কারণ এটা বলা দায়িত্ব আমার।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খাচ্ছি, জেলে যাচ্ছি শুধুমাত্র এ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা এখন সবাই আশাবাদী হয়ে উঠেছি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যারা এই জঞ্জালকে দূর করে দেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে এবং সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে জনগণের একটি পার্লামেন্টনতৈরি হবে।
সাংবাদিকদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মির্জা ফখরুল আহ্বান করে বলেছেন, সব দিক বিবেচনা করে সত্যিকার অর্থে যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখতে পাই। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখতে পাই। মানুষের উপর যেন অন্যায় অত্যাচার না হয়। শুধমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য আর যেন শিশুদের গুলি করে হত্যা না করা হয়। আমি জানি আমার কথা অনেকের মন মতো নাও হতে পারে। কিন্তু সত্য উচ্চারণ করা আমার দায়িত্ব। তাই আমি উচ্চারণ করে বলছি যে আপনারা সে কাজগুলো করেন যাতে একটা সংঘাতহীন ভবিষ্যত, সন্ত্রাসমুক্ত ভবিষ্যৎ এবং মানুষের অধিকার যুক্ত ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি রাজনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতি কাজ করতে দেয়া একমাত্র সমস্যার সমাধান।
আন্দোলনে আহত ও নিহতদের স্বজনদের শেখ হাসিনার বিচার দাবির কথা শুনে মির্জা ফখরুল বলেন, এ অনুষ্ঠানটা আমার জন্য অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে গিয়ে এখানে অনেকেই চোখ হারিয়েছেন, পা কেটে ফেলতে হয়েছে। অনেকে তাদের আপনজন হারিয়েছেন। আমরা ৭১ এ যুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু ২০২৪ আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে এ দেশের সরকারদলীয় লোকদের সাথে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। আমরা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় নাই। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবার সম্মতিতে গঠিত হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়গুলো বিচার করার। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতে ও বর্তমানে এত খুন হয়েছে।
এসময় তিনি আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা ও তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানান এবং আহত ও নিহতদের পরিবারের মাঝে ১৫ লক্ষ্য নগদ অর্থ তুলে দেন।