শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আজ প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমিতে হাজির হয়েছিলেন শিল্পকলা অ্যাকাডেমির গবেষণা বিভাগের পরিচালক অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। তিনি অফিসে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে তার সহকর্মীদের মধ্যে। পরে তোপের মুখে শিল্পকলা থেকে বেরিয়ে চলে যান অভিনেত্রী।
সেখান থেকে বের হয়ে বিকেলে ফেসবুক লাইভে কথা বলেন জ্যোতিকা জ্যোতি।
১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে কথার বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
এসময় জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে ২ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে কাজ করছিলাম। এখন পর্যন্ত আমার চাকরিটা আছে। চুক্তি বাতিল হয়নি। গত দুই মাসে দেশের চলমান অবস্থার মধ্যেই শিল্পকলায় নতুন ডিজি এসেছে। তাই মনে হয়েছে অফিসে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু একাডেমিতে প্রবেশের পর পরিস্থিতি খারাপ লক্ষ্য করেছি। অনেক মানুষ সেখানে চিৎকার করছিলেন। পরে ডিজির সঙ্গে দেখা করি। পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে তিনি আমাকে বেরিয়ে আসতে বললে আমি সেখান থেকে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। কারণ, আমি তো দায়িত্বে আছি। আমাকে অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। আমার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কেন অফিসে আসবো না! আমাদের দেখার পর তারা যে এমন মারমুখী হবে সেটা চিন্তাও করিনি।
আওয়ামী লীগের সমর্থন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার থেকে কোনো ধরণের সুবিধা নেননি বলে জানান এই অভিনেত্রী। তার কথায়, আমি যখন থেকে বোঝা শিখেছি, তখন থেকে একটা সরকারকে দেখেছি। সেটা আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে যে একটা রাষ্ট্রীয় শিল্পকলার পদ বদলে যায় আমার চোখে এটাই প্রথম। আমি কোনো দলের সুবিধা নিয়ে এই পদে আসিনি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়ে এই পদে আসিনি। এই ধারণাটা মিথ্যা। কীভাবে আমার চাকরিটা হয়েছে সেটা আমিই জানি।
শিল্পকলায় নিজের চাকরি পাওয়ার সূত্র টেনে জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, আমার মূল পেশা অভিনয়। ভেবে নিয়েছিলাম আমি সারাজীবন অভিনয় করবো। কিন্তু অভিনয়ে সিন্ডিকেটের কারণে আমি যখন কাজ পাইনি তখন দুইজনকে আমার বায়োডাটা দিয়ে অনুরোধ করেছি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তখনও আমি জানতাম না আমার কী চাকরি হবে। সরকারি চাকরিতে এমন চুক্তিভিত্তিক চাকরি আছে সেটা আমার বেলায় এসে বুঝেছি। এরপর আমাকে নিয়ে তদন্ত হয়েছে। আমি যদি সরকারি সুবিধা নিতাম তাহলে একদিনেই এই পদ থেকে আমাকে বসিয়ে দেওয়া যেতো। সেটা কিন্তু হয়নি।
তিনি বলেন, আমি যখন শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন সেখানে একটা এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করছিল। কেউ সঠিক সময়ে অফিস করতেন না, দায়িত্বের প্রতি প্রত্যেকের অবহেলা ছিল। আমি কিন্তু সেখানে নিয়মিত ছিলাম। নিজের জায়গায় সৎ থেকে কাজগুলো করে যেতে চেয়েছি। কিন্তু আজ সেই জায়গা থেকেই আমাকে বিতাড়িত হতে হলো।
এরপর কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, যতটুকু বয়স পর্যন্ত মানুষ কাজ করতে পারে ততটুকু আমি এই দেশের জন্য দিয়েছি। আমি কখনোই ভাবিনি এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব। এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটা আমার প্রাপ্য কেনো? ক্ষমতা বা এই চেয়ার আমার উদ্দেশ্য ছিল না।