ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাশেম কাসু। এক সময় ভাঙাড়ি ব্যবসা করতেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন বস্তিতে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঢুকেই ভাগ্য বদলে যায় কাসুর।
ঝড়ের বেগে বাড়তে থাকে আবুল কাশেম কাসু ও তার ভাই আবুল হাসেম হাসুর সম্পদ। মাত্র ১০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের আস্থাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হন হাসু-কাসু সহোদর। দেখতে মাথায় টুপি। মুখে দাড়ি। পরিপাটি পোশাক। বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি কতো ভয়ঙ্কর।
পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাদের সম্পদ। বাড়ি, গাড়ি, হোটেল, দোকান, বাংলো, ফ্ল্যাট, প্লট, হাউজিং কি নেই তাদের? আদাবর শেখেরটেক এলাকায় হাসু-কাসুর ক্ষমতার কাছে কেউই পাত্তা পাননি। ক্ষমতা খাটিয়ে দখল করেছেন বিপুল পরিমাণ জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি। অঢেল টাকার জোরে আওয়ামী লীগ ইউনিটের নেতা থেকে দুই ভাই পর্যায়ক্রমে হয়েছেন কাউন্সিলরও। কাউন্সিলর হয়েই যেন আলাদিনের চেরাগ পান হাসু-কাসু।
২০১০ সাল থেকে দুই ভাইয়ের দখলে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন আদাবর শেখেরটেকের অনেক মানুষ। গেল কয়েকদিনে আদাবর শেখেরটেক এলাকায় ঘুরে হাসু-কাসুর অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা তাদের চাঁদাবাজি ও দখলবাজির নানা তথ্য দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গেল আট বছরে পুরো মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় প্রায় ১০ একর জমি দখল করেছেন হাসু-কাসু। দখল করেছেন আস্ত একটি হাউজিংও। সরকারি জমি ভরাট করে গড়েছেন মার্কেট। সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিলেন। জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ভিটেমাটি হারিয়েও কেউ ভয়ে কথা বলার সাহস পান না। নীরবে সহ্য করেছেন। কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়েছেন। প্রতিবাদ করলেই হাসু-কাসু বাহিনীর নির্মম অত্যাচার শুরু হতো।
স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতারাও হাসু-কাসুর মারধর, নির্যাতন, অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি। মতের অমিল হলেই দলীয় নেতাদেরও মারধর করতেন কাসু। দখলে বাধা হয়ে দাঁড়ালেই দলবল নিয়ে হামলে পড়তেন। কুপিয়ে জখম করতেন। হাসু-কাসুর হামলায় মৃত্যু থেকেও ফিরে এসেছেন কেউ কেউ। প্রয়োজনে হত্যা করতেও পিছপা হননি এই হাসু-কাসু বাহিনী। হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, প্রতারণা, মারধর, দখলের অভিযোগে হাসু-কাসু দুই ভাইয়ের নামে অন্তত ৪০টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সরজমিন আদাবর শেখেরটেকের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসেই নিজের বাহিনী নিয়ে জমি দখলে যান হাসু-কাসু। ফাঁকা জমি পেলেই দলবল নিয়ে হামলে পড়েন হাসু। দখল করে ঝুলিয়ে দেন সাইনবোর্ড। কেবল জমি দখলই নয়, নতুন ভবন নির্মাণকারীর কাছ থেকে চাঁদা, দোকান ও অফিস থেকে মাসোহারা, মাদক কারবার সব কাজে তারা দুই ভাই সক্রিয়। আদাবর শেখেরটেকে হাসু-কাসুর কথার বাহিরে চলা যায় না। আধিপত্য ধরে রাখতে এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব হেলমেট বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে পুরো আদাবরে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। কাউন্সিলর আবুল কাশেম কাসু ও তার ভাই হাসু মিলে মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, শেখেরটেক, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং, সিলিকন বেলী, বেড়িবাঁধের নিম্নাঞ্চল এলাকায় বিপুল পরিমাণ দখল করেছেন। হাসু-কাসু চলাফেরা করেন টয়োটা হ্যারিয়ার ঢাকা মেট্রো- ঘ ১৫-১৫৭৫, রেভ-৪ ও একটি প্রাডো গাড়িতে। এ ছাড়া তাদের পরিবারের ৬টি নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে।
যাদের মাধ্যমে দখলবাজি করেন: কাউন্সিলর কাসু ও তার ভাই সাবেক কাউন্সিলর হাসুর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, মামলা-হামলা, ভুয়া দলিল তৈরি করে জাল স্বাক্ষরে সাধারণ মানুষের জমি দখলের নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাউন্সিলর আবুল কাশেম কাসু ও তার ভাই সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম হাসু তাদের দখলবাজি চালান দুই ব্যক্তির মাধ্যমে। এরা হলেন মোজাম্মেল হক ওরফে মোজা হাজী ও শাহজাহান। তাদের নামে ভুয়া দলিল করে জমি দখল করে পরে তাদের থেকে বুঝে নেন হাসু-কাসু। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি’র একটি অনুসন্ধানেও এই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদকের হাতে থাকা ডিবি’র একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে দেখা গেছে মোজা হাজী কাউন্সিল কাসু ও হাসুর হয়ে দখলবাজি করেন এবং অসহায় লোকের বিপুল পরিমাণ জমি, ফ্ল্যাট, প্লট দখলের কথা স্বীকার করে আর এমন কাজ করবেন না মর্মে ডিবিতে একটি মুচলেকা দিয়েছেন। তবে ডিবিতে মুচলেকা দিয়ে এসে তার দখলবাজি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
হাসু-কাসুর যত জমি, প্লট: মোহাম্মদপুর, আদাবর, ঢাকা উদ্যান, শেখেরটেক এলাকায় তাদের বেশকিছু জমি, ফ্ল্যাট ও প্লটের সন্ধান মিলেছে। রামচন্দ্রপুর মৌজার আরএস ২০৩ নং দাগে ৬৪ কাঠা, আরএস ২০৯ নং দাগে ১৬০ কাঠা জমি দখল করে রেখেছে হাসু- কাসু। এই জমির মালিক মো. আলী হোসেন। আদাবর এলাকার হারুন ও কামাল নামের দুই ব্যক্তির ৫৬ কাঠা জমি দখল করে নেয় হাসুর ক্যাডার বাহিনী। সেখানে শাওন ট্রেডার্স নামের একটি দোকান উঠিয়ে ভাড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই সাতটি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দেন হাসু। এ ছাড়া আদাবরের ১০ নম্বর রোডের ৫ কাঠার প্লট, শেখেরটেকের ৭ নম্বর রোডের ৩ কাঠার প্লট, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে ৮ ও ১০ কাঠার দুটি প্লট, উত্তর আদাবরের আজিজ গার্মেন্ট নামের ৬ তলা বাড়ি রয়েছে। ঢাকা উদ্যানের ৫ নম্বর রোডে সি ব্লকে রামচন্দ্রপুর মৌজায় সিএস,এসএ ২৬১ নং দাগে ৫ কাঠা জমি দখল করে দেয়াল করে রেখেছে এই হাসু-কাসু। এই জমির মালিক হাজী কালাচাঁন কোম্পানি।
এ ছাড়া রামচন্দ্রপুর মৌজায় ঢাকা উদ্যান ওয়াকওয়ের পাশে ৬ নম্বর রোডে সি ব্লকে সিএস,এসএ ২৫৮ দাগে ৩ কাঠা জমি দখল করে রেখেছে কাসুর ডানহাত মোজাম্মেল ওরফে মোজা হাজী। এই জমিরও মালিক হাজী কালাচাঁন কোম্পানি। একই এলাকার ৩ নম্বর রোডে সি ব্লকে সিএস, এসএ ২৬৩ দাগে ৭ কাঠা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। জমির প্রকৃত মালিক শুক্কুর পোদ্দার ও আনিসুর রহমান। হাসু-কাসুর দখলবাজি থেকে রেহাই পাননি ২ মুক্তিযোদ্ধা ও আদাবর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের জমিও। রামচন্দ্রপুর মৌজায় শেখেরটেক এলাকায় সিএস, এসএ ২০৯ দাগে ৩০ কাঠা জমি দখল করে টিনশেড বাড়ি তৈরি করেছেন কাউন্সিলর কাসু। জমির মালিক মুক্তিযোদ্ধা মো. বদিউল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও সালাউদ্দিন শামীম। একই মৌজার সিএস, এসএ ২৬৩, আরএস ১৫২ ও ১৫৪ দাগে ৫ কাঠা জমি দখল করে রেখেছেন কাসু। জমির মালিক মাসুদা দিলারা ও ফারুক আহমেদ সরদার। এ ছাড়া আদাবর বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১০ নম্বর রোডে আদাবর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন শামীমের বায়নামূলে কেনা ১০ কাঠা জমি দখল করে কাউন্সিলর অফিস বানিয়েছেন আবুল কাসেম কাসু। এই জমি নিয়ে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা চলমান আছে। মামলা নং ১১২/১৬। এদিকে আদাবর ১০ নম্বর রোডে সিএস, এসএ ২৮ নং দাগে হাজী বশির উদ্দিন ও হাজী নাছির উদ্দিনের ৫ কাঠা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া শেখেরটেক ১২ নং রোডে রাস্তার জমি দখল করে বাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করেছেন হাসু-কাসু। মার্কেট থেকে মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। শ্যামলী হাউজিং দ্বিতীয় প্রকল্পের রামচন্দ্রপুর মৌজায় সিএস, এসএ ২১৯ দাগে ২৪ কাঠা জমি দখল করেছেন কাউন্সিলর কাসু। মালা হাউজিংয়ে সিএস, এসএ ২০৯ ও আরএস ১৭৩২ দাগে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি দখল করে কাশেম প্রপার্টি নামে প্লট তৈরি করে রেখেছেন এই সাবেক কাউন্সিলর। ওই জমির মালিক মজিবুর রহমান। তিনি হাসু-কাসুর ভয়ের এলাকাছাড়া। এ ছাড়া শেখেরটেক বালুর মাঠ এলাকায় ২০টি প্লট দখলের অভিযোগ রয়েছে। দখল করা প্লটগুলো পর্যায়ক্রমে বিক্রি করছেন কাউন্সিলর কাসু। রামচন্দ্রপুর মৌজায় সিএস, এসএ ৯১ দাগে ১৪ কাঠা জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এই জমির মালিক শাহানা ইসলাম, আবু মুছা, আবু সাঈদ ও শাহজাহান কবির। দখলের পরে ওই জমিতে টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেছেন কাসু।
কাউন্সিল হাসুর আমলে যত দখল: প্রথমে কাউন্সিলর হন আবুল হাসেম হাসু। তিনি বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, উত্তর আদাবরের ১৪৫/৩ নম্বরের দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি প্লট দখল। হাজী মো. ইউসুফ নামের এক ব্যক্তির শেখেরটেক এলাকায় ৩ কাঠা, বায়তুল আমান হাউজিংয়ে সাড়ে ৫ কাঠা জমি দখল। নবোদয় হাউজিং এলাকায় চারটি প্লট, মালেক গলিতে দুটি, আদাবরের বিভিন্ন রোডে সাতটি প্লট, আদাবরের ১০ নম্বর রোডের ৫৯৫ নম্বরের ১০ কাঠা প্লট, ১৩ নম্বর রোডে জমি দখল করে ১০টি দোকান, হোসনাবাদ মার্কেটের পাশে ১০ কাঠার প্লট দখল। আলিফ হাউজিংয়ের খাল দখল করে অফিস নির্মাণ, মনসুরাবাদ ব্রিজের পাশে জায়গা দখল করে অফিস নির্মাণ। কমফোর্ট হাউজিং ও সুনিবিড় মধ্যস্কুল এলাকায়ও কয়েকটি প্লট দখলে রয়েছে।
আজিজ গার্মেন্টসের জায়গা মাদ্রাসার নামে লিখে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শেখেরটেক ও বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডের শেষ মাথায় ৫টি প্লট দখলে নিয়েছে হাসুর ঘনিষ্ঠ হাজী মোজাম্মেল হক মোজা হাজী ও অন্যরা। কমফোর্ট হাউজিংয়ের আদাবর ১৭/এ রোডের শেষ মাথায় ২টি প্লট, ১৬ নম্বর রোডের কাঁচা বাজারের সাত কাঠা জমি দখল এবং ১৬/এ রোডের মসজিদ গলিতে জমি দখল করে কাউন্সিলরের লোকজন ব্যবসা করছেন। নিজের বাড়ি রক্ষা পেলেও চার বছর ধরে হাসু-কাসুর দখলে আদাবরের বাসিন্দা বাবুলের শ্বশুরের জমি। মনসুরাবাদ মসজিদের পশ্চিম পাশে আক্তার প্রোপার্টিজের আগের জমিটা তার শ্বশুরের। ১১ শতাংশ জমিটি দখলে বাধা দেয়ায় একইভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বাবুলের শ্যালক আবু জাফর তানসেমকে। এ ছাড়া আদাবর ১০নং রোডের মাথায় ৫৯৫ নম্বরের ১০ কাঠা প্লট দখল করে সেখানে জাতীয় পার্টির কার্যালয় বানিয়ে দখলে রাখা হয়েছে। এ প্লট সংলগ্ন অনেক দোকানও রয়েছে।
চাঁদাবাজির যত স্পট: শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে মুনসুরাবাদ হাউজিং পর্যন্ত ফুটপাথে রাস্তার দুই ধারে ৩০০ ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হতো। এতে মাসে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা আদায় হয়। এসব টাকা তুলতেন ইদ্রিস। পরে ইদ্রিস এই টাকা বুঝিয়ে দিতেন কাউন্সিলরের ভাই আবুল হাসেম হাসুর কাছে। সেখান থেকে চাঁদার একটি অংশ কাউন্সিলরের পকেটে চলে যেত। এ ছাড়া নবোদয় বাজারের দুই পাশে ফুটপাথে ৫০টি দোকান বসিয়ে প্রতিদিন দোকানপ্রতি ৩০০ টাকা চাঁদা তোলা হতো। শেখেরটেক ১ নাম্বার রোডের মাথা থেকে বেগম নুরজাহান রোড পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাথে ১৫০টি দোকান বসানো হতো। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হতো। এই চাঁদা তুলতেন সেলিম ও রায়হান। পরে তারা এই টাকার একটি অংশ কাউন্সিলরের কাছে পৌঁছে দিতেন। শ্যামলী, আদাবর শেখেরটেক ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্রায় ২৫টি হাউজিং রয়েছে। এসব হাউজিংয়ে অন্তত ১২ হাজার বাসাবাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাট প্রতি মাসে ১০০ টাকা ময়লা বিল তোলা হয়। এতে প্রতি মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা ময়লা বিল আসে।
এই টাকা থেকে অর্ধেক নিতেন সাবেক কাউন্সিলরের বোন মনোয়ারা বেগম। তবে ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। কাউন্সিলর তার বোন মনোয়ারা বেগমের মাধ্যমে ময়লা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সংগ্রহের কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা বলছেন, সুমন আবুল কাশেমের আপন চাচাতো বোনের ছেলে। ওই ওয়ার্ড থেকে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিলেও তাদের কাউকে প্রত্যয়ন দেননি কাউন্সিলর। তার ভাগিনা দরপত্র পাওয়ার পরেই আমাদের এলাকা ছাড়তে হয়েছে। আদাবর রিং রোড, আদাবর, শ্যামলী এলাকার বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। চাঁদার টাকা দিতে দেরি হলে হাসপাতালের সামনে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। ডিবি পুলিশের করা প্রতিবেদনেও এই তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া চাঁদা না দিলে রোগী ভাগিয়ে দেয়া, এবং হাসপাতালে প্রবেশ করে হামলা চালানো হয়। এই চাঁদা তোলেন কাসুর সহযোগী সেলিম। অভিযোগ আছে, রিং রোডের এসপি হাসপাতাল থেকে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার, ডিপিআরসি হাসপাতাল থেকে মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার, গ্রীন হাসপাতাল থেকে মাসে ১ লাখ ১০ হাজার, ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে মাসে ১ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হতো। এ ছাড়া ক্লিনিকগুলো মাসিক ৫০ হাজার সালামি দিতেন।
ওদিকে শ্যামলী হাউজিং প্রথম প্রকল্পের পশ্চিম মাথায় বাঁশের সাঁকোর আশপাশে মাদকের স্পট চলে। এখানে থেকে পুরো শেখেরটেক, আদাবর ও শ্যামলী এলাকায় মাদকের সাপ্লাই হয়। এই স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করেন মাঈনুদ্দিন ও বাবু ওরফে চা বাবু। এই স্পট থেকে দৈনিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাঁদা আদায়ের কাজ করেন মাঈনুদ্দিন, বাবু ও কবির। পরে সেই টাকা থেকে কিছু অংশ কাউন্সিলরের ভাগিনা সুমনের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো।
৩০নং ওয়ার্ডে হাসু-কাসুর হয়ে কোন এলাকা কে নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি তালিকা এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। এতে দেখা যায়, আদাবর ও আদাবর উত্তর নিয়ন্ত্রণ করতেন ইদ্রিস, রায়হান ও সোহান। মালা হাউজিং নিয়ন্ত্রণ করতেন আলামিন ও ইয়ামিন। সুনিবিড় হাউজিং নিয়ন্ত্রণ করতেন কালা রাজ্জাক। নবোদয় হাউজিংয়ের বাজারঘাট ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাসুদ ওরফে কালা মাসুদ। পুরো শেখেরটেকে একক আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন সেলিম। সেলিমের সহযোগী রয়েছে সাগর। আদাবর ও মুনসুরাবাদ এলাকার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতেন বাতেন।
শেখেরটেক, আদাবর ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় কাউন্সিলর আবুল কাশেম কাসু ও তার ভাই আবুল হাসেম হাসুর নিজস্ব কিশোর গ্যাং বাহিনী ছিল। এই বাহিনী দিয়ে পুরো এলাকায় রাজত্ব করতেন কাউন্সিলর দুই ভাই। এরা বিভিন্ন হাউজিংয়ে হামলা চালিয়ে ফ্লাট, প্লট ও জমি দখল করে নিতেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও এসব কিশোর গ্যাং বাহিনী ব্যবহার করা হতো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কাউন্সিলর আবুল কাশেম কাসুকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পরে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি