সাভারের আশুলিয়ায় ভ্যানে গুলিবিদ্ধ লাশের স্তূপ করার একটি লোমহর্ষক ভিডিও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। গোপনে ধারণ করা এমন নৃশংস ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতে আরও একবার পুলিশের ওপর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জনমনে। দাবি উঠেছে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচারের।
জানা গেছে, নৃশংস এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের চার সদস্য প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া ‘নির্দেশদাতা’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবদুল্লাহিল কাফীকে গ্রেপ্তারের পর নেওয়া হয়েছে ৮ দিনের রিমান্ডে।
১ মিনিটের ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে প্রদর্শিত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় কর্মরত কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযুক্তদের শনাক্ত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিডিওতে থাকা ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল বলে জানিয়েছেন।
ভিডিওর শুরুর দিকে লাশের স্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পুলিশের ভেস্ট ও হেলমেট পরিহিত ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার বাড়ি বরিশালের হিজলায়। পাশেই হেঁটে যাওয়া (মুখে হালকা দাড়ি) ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রেজাউল করিম। ভিডিওর শেষাংশে থাকা হাতে হেলমেট ও পুলিশের ভেস্ট পরিহিত আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ রায় ও তার সামনে কচুপাতা রঙয়ের গেঞ্জি পরা (থানার ভেস্ট পরিহিত) কনস্টেবল মুকুল বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে।
যদিও সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমার কোনো অস্ত্র নাই। ভিডিওতে থাকা ওই ব্যক্তি আমি নই।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হত্যায় জড়িত কয়েকজন শনাক্তও হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি ড্রোন উড়িয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তবে সেটি পুলিশের ড্রোন কি না তা জানি না। থানার বিভিন্ন গলিতে ছাত্র-জনতা প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পুলিশ লাশগুলো থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশভ্যানে লাশগুলো রেখে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, আমরা সেদিন ‘ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফীর নির্দেশনা পালন করেছি। জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে ৫ শতাধিক মানুষ। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।