একটি চাকরি ছাড়ার জন্য কি প্রয়োজন, পদত্যাগপত্র? খুব বেশি হলে কিছু দরকারি কাগজপত্র। তবে, জাপানের কর্ম সংস্কৃতির বেলায় খাটে না এই সত্য। চাকরি ছাড়তে সেখানে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়। পদত্যাগপত্র ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি মুখোমুখি হতে হয় কটু কথারও। চাকরি ছাড়তে তাই বিভিন্ন রেজিগনেশন এজেন্সির দ্বারস্থ হচ্ছেন জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা।
এমনই একজন কর্মচারী ইউকি ওয়াতানাবে। দিনে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা অফিসে কলুর বলদের মতো কাজ করতে হতো তাকে।
চাকরি ছাড়ার ইচ্ছা থাকলেও ঊর্ধ্বতনের হাতে পদত্যাগপত্র দেয়ার সাহস ছিল না তার। কারণ, জাপানের কর্ম সংস্কৃতিতে চাকরি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করাকে গুরুতর অসম্মান হিসেবে দেখা হয়।
বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়তে নতুন এক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। শরণাপন্ন হন ‘মোমুরি’ নামের রেজিগনেশন এজেন্সির। টাকার বিনিময়ে কর্মচারীদের চাকরি ছাড়তে সাহায্য করে এই প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে মামলা-মোকাদ্দমা পর্যন্ত গড়ালে দেয়া হয় আইনি সহায়তাও।
জাপানে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান বহু আগে থেকেই কাজ করছে। তবে, করোনা মহামারির পর কর্মীদের মধ্যে চাকরি পরিবর্তনের ঝোঁক বাড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের বেড়েছে জনপ্রিয়তা।
মোমুরি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানান, অনেক সাধারণ কর্মচারী কাঁদতে কাঁদতে এসে তার সাহায্য চেয়েছেন। কারও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগপত্র ছিঁড়েও ফেলেছেন। কাউকে আবার ‘অভিশপ্ত’ খেতাব দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মন্দিরে।
জাপানে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার সংস্কৃতি রয়েছে। বিভিন্ন খাতের কর্মচারীরা শাস্তিমূলক কর্মঘণ্টা, সুপারভাইজারদের উচ্চচাপ এবং বৈষম্যের অভিযোগ করেছে। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক চাপ এতোটাই মারাত্মক যে বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য ‘কারোশি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ ‘অতিরিক্ত কাজে মৃত্যু।’ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তারা ব্যাপকভাবে ‘কালো তালিকার সংস্থা’ হিসেবে পরিচিত।