আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। নৌপথে দেশ ছাড়ার সময় তাদের আটক করে কোস্টগার্ড সদস্যরা। পরে দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে।
ট্রলার থেকে আটকের সময় আনিসুল হককে সবাই চিনলেও, সালমানকে কেউই চিনতে পারেননি। মুখভর্তি দাড়ি ফেলে দেওয়ায় চেহারাই বদলে যায় তার।
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের অবস্থা বিবেচনা করে সালমান বিমানবন্দরে যান দেশ ছাড়তে। তবে সব জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সরাসরি চলে যান উত্তরায় নিজের মালিকানাধীন একটি জুট মিলে। সেখানে গিয়ে নিজেই নিজের দাড়ি শেভ করেন তিনি। পরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে রাতে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে জুট মিল ত্যাগ করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নিজেই এসব কথা স্বীকার করেছেন সালমান। তার বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেক্সিমতো গ্রুপে কর্মরত নৌবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে নৌপথে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেন। সেই কর্মকর্তাই মোটা অঙ্কের টাকায় তাকে ম্যানেজ করে দেন একটি ইঞ্চিনচালিত ট্রলার। রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের কাঞ্চন ব্রিজ এলাকা থেকে ওই ট্রলারে চড়েন সালমান। সঙ্গে নেন স্যাটেলাইট ফোন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং ঘনিষ্ঠজন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে।
সালমান-আনিসুলকে বহনকারী নৌযানটি চলে যায় সোজা ভোলায়। যাওয়ার সময় মাঝ পথ থেকে সঙ্গে নেওয়া হয় যাবতীয় খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী। টানা সাত দিন বঙ্গোপসাগরে ভাসতে থাকেন তারা। মাঝে ভারতে পাড়ি দিতে সুন্দরবনের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার কাছাকাছি পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তবে পরিস্থিতি সুবিধাজনক মনে না হওয়ায় নৌকার সারেং ফের ফিরে আসেন ভোলা এলাকায়। সিদ্ধান্ত নেন মিয়ানমার পাড়ি দেবেন।
ধরা পড়ার পর কোস্টগার্ড সদস্যরা শুরুতে চিনতে পারেননি বলে দাবি করেছেন সালমান। বলেছেন, শেভ করার পর তিনি নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলেন না। কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও তাকে শুরুতে চিনতে পারছিলেন না। তারা প্রথমে আনিসুল হককে চিনে ফেলেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আনিসুলই কোস্ট গার্ডের সদস্যদের সালমানকে চিনিয়ে দেন।
সালমানের বরাত দিয়ে তদন্ত সূত্র জানায়, এস আলমের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া দেড় লাখ কোটি টাকার অর্ধেকই শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এসব অনিয়ম হয়। তবে এসব বিষয়ে কেউ ‘টু’ শব্দ করার সাহস করেনি। কেবলমাত্র অর্থ পাচার নয়, দেশের ইস্টার্ন রিফাইনারি, চিনিকল হাতিয়ে নিলেও এস আলমের বিষয়ে সবাই নীরব ছিলেন।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা অর্থ, পরামর্শ ও বক্তৃতা কিংবা বিবৃতি দিয়ে উৎসাহিত করেছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। গ্রেপ্তার প্রায় সবাই নানাভাবে নিজেদের জড়িয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, নিজের বান্ধবীর জামিন, নিয়োগ, বদলি এবং পদায়ন বাণিজ্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হককে। শুরুর দিকে অস্বীকার করলেও এখন তিনি বলছেন, এর বেশির ভাগই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুরোধ ছিল। তবে মাঝেমধ্যে তৌফিকা হয়তো নিজেও কিছুটা করেছে। তবে তার পরিমাণ খুবই কম ছিল বলে দাবি তার। ঘুষের লেনদেন কোথায় হতো? এমন প্রশ্নের জবাবে নীরব থাকেন আনিসুল।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।