জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রধান নির্বাহী পাভেল দুরোভকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুঞ্জন উঠেছে পাভেলের গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত আছেন জুলি ভাভিলোভা নামের ২৪ বছর বয়সী এক নারী। কেননা পাভেলের গ্রেফতারের পর নিখোঁজ রয়েছেন জুলিও।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ক্রেমলিনের কাছে এনক্রিপ্ট করা ডেটা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করার পরে ২০১৪ সালে রাশিয়া থেকে পালিয়ে যান পাভেল। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টার্গেট ছিলেন।
টেলিগ্রামের সংযমহীনতা এবং প্ল্যাটফর্মের ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী মাদক পাচার ও পেডোফিলিয়ায় জড়িত থাকার দাবিসহ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে কথিত অপরাধের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান তদন্তের অংশ হিসাবে ফরাসি কর্তৃপক্ষও পাভেলের বিরুদ্ধে তদন্ত পরোয়ানা জারি করে।
অবশেষে শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্যারিসের উত্তরের লো বোর্গেট বিমানবন্দরে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকেই অনেকেই দাবি করছেন তার গ্রেফতার হওয়ার পেছনে জুলিই ভূমিকা রেখেছিলেন। বলা হচ্ছে, জুলির ওপর নজর রেখেই পাভেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
গ্রেফতারের পূর্বে পাভেলের সফরসঙ্গী ছিলেন জুলি। তবে পাভেলের গ্রেফতারের পর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তার পরিবার। তারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, ঘটনার পর থেকে তারা জুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
ফরাসি গোপনীয়তা তথ্য গবেষক ব্যাপটিস্ট রবার্ট পাভেলের গ্রেফতারের পেছনে জুলির সামাজিক মিডিয়ার কার্যকলাপের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। রবার্টের মতে, জুলির পাভেলের সঙ্গে আজারবাইজান থেকে ভ্রমণের পোস্টগুলোই নিরাপত্তাবাহিনীকে টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠাতার গতিবিধির তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছে, যার ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তার (জুলি) পোস্টগুলো তাকে গ্রেফতারে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে কিনা তা বলা জটিল, তবে কেউ যদি তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুসরণ করে, তাহলে সহজেই পাভেলের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারবে।’
রবার্ট জুলির এক্সে (সাবেক টুইটার) যেসব পোস্ট নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন, ওইসব পোস্টগুলোর একটিতে দেখা যায়, জুলির এক্স অ্যাকাউন্টে গত ২১ আগস্টের উজবেকিস্তানে তাদের দুজনের একসঙ্গে ভিডিও রয়েছে। এতে পাভেলের গাড়ির যাত্রীর আসনে জুলিকে দেখা গেছে।
অন্যান্য পোস্টগুলোও ইঙ্গিত দেয় যে, তারা আজারবাইজানের রাজধানীতে একই শুটিং রেঞ্জ এবং হোটেল পরিদর্শন করেছে। আপাতদৃষ্টিতে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেলেও তারা কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তা স্পষ্ট নয়। তারা কোথায়, কখন দেখা করেছে তা-ও জানা যায়নি। তবে তারা দুজনই টেলিগ্রামের সদর দফর দুবাইতে ছিলেন।
তবে রুশ এই টেক বিলিয়নারের গ্রেফতার এবং জুলির অন্তর্ধান-তত্ত্বগুলিকে উস্কে দিচ্ছে যে, পাভেলকে ধরার জন্য জুলিকে ‘হানি-ট্র্যাপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। তবে এ ধরনের জল্পনা সত্ত্বেও এখনো এ ধরনের কোনো চক্রান্তের সঙ্গে তার যোগসূত্রের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পাভেলের কোম্পানি বলেছে, পাভেল লুকিয়ে ছিলেন না বা পলাতকও ছিলেন না, কারণ তিনি নিয়মিত দ্বৈত-ফরাসি নাগরিক হিসাবে ইউরোপে ভ্রমণ করতেন।
২৪ বছর বয়সি জুলি দুবাইয়ের একজন ক্রিপ্টো কোচ। ইনস্টাগ্রামে তার ২০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ইংরেজি, রুশ, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষায় পারদর্শী তিনি।