ছাত্র-জনতার রক্তের অক্ষরে লিখিত অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান প্রিয় মাতৃভূমির জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার অপার সম্ভার। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষ পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার এই বিজয়কে সুসংহত করে আপামর জনসাধারণের সামগ্রিক মঙ্গল এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে আশু করণীয় সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা:
১. বর্তমান সংবিধান এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদ বিকাশে সহায়ক বিধায় এই সংবিধান এবং সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ক্ষমতার ভারসাম্য সমন্বিত রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান রচনা পূর্বক গণভোটের আয়োজন এবং পর্যায়ক্রমে নতুন প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সৎ, যোগ্য এবং দক্ষ লোকদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। সংসদ সদস্যগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও সিনেটের ন্যায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য রক্ষা করবেন।
২. বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত সকল প্রকার গুম-খুন বিশেষ করে বিগত ছাত্র আন্দোলনে যারা প্রকাশ্যে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা। উক্ত আন্দোলনে নিহত সকল নাগরিকের পরিবারকে অতি দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রদান এবং আহত সকলের সরকারি ব্যবস্থাপনায় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. বিগত সরকারের আমলে অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ব্যাংক-বীমা-শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের মাধ্যমে যে সকল রাজনৈতিক নেতা কিংবা সরকারি-বেসরকারি আমলারা অন্যায়ভাবে বিপুল বিত্তের অধিকারী হয়েছেন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত তাদের সকল সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করণ। বিদেশে পাচারকৃত সকল সম্পদ অতি দ্রুত প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. ঔপনিবেশিক আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত এবং গণবিরোধী বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে গণতান্ত্রিক, জনকল্যাণমূলক, বিকেন্দ্রীকৃত বিচার ব্যবস্থার প্রচলন।
৫. ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্ট নিপীড়নমূলক পুলিশ বাহিনী থেকে ফ্যাসিবাদের অনুচর এবং দুর্নীতিবাজ সদস্যদের বিতাড়নপূর্বক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি জড়িত ছাত্রদের মধ্যে থেকে কম পক্ষে এক লক্ষ সদস্য নিয়োগ দিয়ে জনবান্ধব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৬. শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যিকারের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা।
প্রথাগত দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা এবং ছাত্রদের মাঝে ভবিষ্যৎ দেশ পরিচালনার উপযোগী নেতৃত্ব তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অযোগ্য এবং অনৈতিক শিক্ষকদের অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশে যেতে ইচ্ছুক বিদেশে কর্মরত মেধাবী এবং লব্ধ প্রতিষ্ঠদের নিয়োগ প্রদান।