অন্তর্বর্তী সরকার এখনও পোক্ত হয় নি, তাকে উৎখাত করবার একের পর এক চাল দেখছি আমরা। এবার দেখলাম গরিব আনসারদের দিয়ে প্রতিবিপ্লব ঘটানো এবং শেখ হাসিনার সরকার ফিরিয়ে আনার একটা মহড়া।
অথচ সরকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গরিব আনসারদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়েছেন। সরকার এখনো থিতু হয়ে বসতে পারে নি।
অন্যদিকে বন্যা বা মহাপ্লাবন আমাদের বিশাল বিপর্যয় হয়ে হাজির হয়েছে। আনসার প্রতিনিধিদের এ কথা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তারা সচিবালয় ঘিরে রেখেছিলেন এবং উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের কাউওকেই বেরুতে দিচ্ছিলেন না। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় আনসাররা এভাবে সচিবালয় ঘিরে কি দাবিদাওয়া জানিয়েছিলেন? না। তাহলে এখন কেন?
তাঁরা সচিবালয় থেকে কাউকে বেরু্তে দিচ্ছিলেন না। কেন? কি যুক্তি? কার্যত তাঁরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আনসারদের এটা ঠিক হয় নি।
ছাত্রদের বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিবিপ্লবের এই চেষ্টায় আবারো প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট গঠনতন্ত্র রেখে এবং প্রেসিডেণ্টের উপদেষ্টা সরকার বানিয়ে যে অবৈধ ও দুর্বল সরকার কায়েম করা হয়েছে ফ্যাসিস্ট শক্তি কত সহজে তাকে ফেলে দেবার চেষ্টা করতে পারে। একের পর এক করেও যাচ্ছে। এ কঠিন পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হয়েছে ছাত্রদের।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কি করেছিল? কেন সেনাবাহিনী সচিবালার পাহারা দেয়নি? প্রতিবিপ্লবের নকশাটা কে সাজিয়েছে?
দাবি পেশ করবার যে সময় ও পদ্ধতি আনসাররা বেছে নিয়েছেন সেটা প্রতিবিপ্লবীশক্তিকে শক্তিমান করেছে, এটা তাদের বুঝতে হবে। শুধু তাই নয়, মাত্র দুই সপ্তাহ বয়েসি অন্তর্বর্তী সরকারকে সজ্ঞানে আনসাররা বিতর্কিত তোলার চেষ্টা করেছেন। অথচ তাঁদের ন্যায্য দাবিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে বলে তাদের পরিষ্কার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সরকার জানিয়েছিলেন এখন আমাদের উচিত বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। ন্যয্য দাবি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
ছাত্রদের-জনতার সঙ্গে আনসারদের এই মুখোমুখি অবস্থান দুঃখজনক এবং মোটেও কাম্য নয়। বিপজ্জনকও বটে।
প্রতিবিপ্লবী শক্তি এটাই চায়: বিভেদ। অথচ এখন আমাদের দরকার ঐক্য ও সং হতি, মোটেও বিবাদ বা বিভেদ নয়। ছাত্র নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। তাহলে একদিকে সরকারের সদয় বিবেচনার আশ্বাসের পরও কারা আনসারদের সচিবালয় ঘিরে রাখতে বাধ্য করেছিলেন তাদের শনাক্ত করা দরকার। তেমনি তাদের দ্বারা ব্যবহৃত নিরীহ আনসারদের যেন আমরা ক্ষমা করি। কোন ভাবেই তাদের শত্রুপক্ষে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
প্রতিবিপ্লবী শক্তি ঠিক এই বিভাজন ও শত্রুতাই চায়।
আমরা আশা করব ছাত্রনেতৃত্ব আনসারদের জনগণের লড়াই-সংগ্রাম থেকে বিভাজিত বিভক্ত করবার প্রতিবিপ্লবী ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁদের দাবিদাওয়া গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন। তাঁদের ন্যায্য দাবিদাওয়া কিভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় সেই দিকে আমরা সকলেই মনোযোগ দেব।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও প্রতিবিপ্লবীদের এই ব্যর্থ চেষ্ট ক্ষমা করা হবে না।