‘চৌদ্দগ্রামে বন্যা হবে, এত পানি হবে কল্পনাও করিনি। উপজেলাটি ভারতের সীমান্তবর্তী হলেও এখানে কখনো বন্যা হয়নি। আমার ছিয়াত্তর বছরের জীবনে এত পানি দেখি নাই।’
অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মোজাম্মেল হোসেন আশ্রয় নিয়েছেন উপজেলার বাতিসা বালিকা বিদ্যালয়ে স্থাপিত আশ্রয় কেন্দ্রে। এলাকার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে এলাকার পানি বেড়ে যায়। ঘরবাড়ি ভেসে যায়। আমার গ্রাম দেবীপুরটি অত্যন্ত উঁচু, এখানে এত পানি হবে কল্পনাও করতে পারিনি। উপায়ান্তর না দেখে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে এসে উঠি। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কবে বাড়ি ফিরব জানি না।’
আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া সোনাপুর গ্রামের বিধবা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বুধবার রাতটি ছিল আমাদের জন্য বিভীষিকাময়। রাত যত গভীর হচ্ছিল, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতও হচ্ছিল। পানিও হুড়মুড় করে বেড়ে চলছে। মনে করেছিলাম আজই শেষ রাত। আল্লাহ দয়া করছেন বলে এখনো বেঁচে আছি। পরদিন বৃহস্পতিবার কলার ভেলায় করে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। ঘরবাড়ির অবস্থা কেমন, তাও জানি না।’
মোজাম্মেল ও ফিরোজার মতো এক হাজারের বেশি পরিবার ভানবাসী হয়ে বাতিসা গার্লস স্কুল কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে তাঁদের ফেলে আসা বাড়িঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। আনোয়ারা বেগম (৬০) ও মনোয়ারা বেগম (৬২) দুই বোন। গত বুধবার রাতের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এ বয়সে কখনো চৌদ্দগ্রামে বন্যা হয়নি। এখনো বেঁচে আছি, এটাই শুকরিয়া। বাড়িঘরে পানি থই থই করছে। এক কাপড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। কবে পানি নামবে, জানি না।’