ঘুষ নেয়ার অপরাধে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে নিজ পদে ইস্তফা দিলেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মদ রাসেল। তিনি দীর্ঘদিন থেকে তার অফিসে আসা সেবাগ্রহীতাদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিতেন। ঘুষ ছাড়া তার অফিসে কোন কাজ হতো না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ আগস্ট বুধবার সকাল থেকে ছাত্র- জনতা ঘুষের টাকা ফেরত ও তার শাস্তির দাবীতে অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে মাসুদ নামের একজন সেবাগ্রহীতার কাছে ১হাজার টাকার খাজনার বিপরীতে ১৩ হাজার টাকা গ্রহণ করে তার অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবীর। পরে বুধবার সকালে ছাত্ররা এ সংবাদ পেলে কেদার ভুমি অফিসে আসেন তারা। মাসুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছাত্ররা অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবীর ও ভুমি কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মদ রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ঘুষের ১৩ হাজার টাকা ছাত্রদের উপস্থিতিতে ফেরত দেয় অফিস সহায়ক।
এরপর শতশত জনতা অফিসটি ঘিরে রেখে বিক্ষোভ করেন। এসময় ছাত্রদের কাছে অনেক ভূক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে আসেন। দুপুর হতেই বিক্ষোভের মাত্রা তীব্র হয়। পরে ছাত্র-জনতার চাপের মুখে নিজ দোষ স্বীকার করে, পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি ইস্তফা পত্র লিখে দস্তখত করে ছাত্রদের নিকট দেন তিনি। আন্দোলনের তোপের মুখে তিনি অফিসের ছাদে উঠে উপস্থিত বিক্ষোভকারী জনতার উদ্দেশ্যে নিজ কর্মের জন্য মাফ চান। এরপর জনতা তাকে জুতার মালা পড়িয়ে দেয়।
ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, গতকাল মাসুদ নামের একজনের জমির খাজনা দিতে এলে তার নিকট ১৩হাজার টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১হাজার ৪০ টাকা সরকারী ফি বাবদ আর বাকী টাকা উপহার হিসেবে নেওয়া হয়। গতকাল স্যার (ভূমি উপসহকারী) উপস্থিত ছিলেন না। তার সাথে ফোনে কথা বলে এই টাকা রেখে দিয়েছিলাম। এখান থেকে স্যার সাড়ে সাত হাজার টাকা নিতেন বাকী টাকা আমি নিতাম। আজ ছাত্রদের কাছে বিষয়টা গেলে সেবাগ্রহীতকে সব টাকা ফেরত দিয়েছি।
ভূমি উপসকারী হুসাইন মোহাম্মদ সকল অনিয়ম ও ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি নিজ অপরাধের জন্য ছাত্রদের নিকট একটি ইস্তফা পত্র দিয়েছেন
এদিকে বিকাল ৫টার দিকে খবর পেয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহম্মেদ ঘটনা স্থলে আসেন। পরে ছাত্র জনতার কথা শোনেন তিনি। এসময় ভূমি উপসহকারীর ইস্তফাপত্রটি ছাত্ররা তার নিকট হস্তান্তর করেন। পরে তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি ও ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে উপসহকারীকে নিজ জিম্মায় নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জানান, ভূমি উপসহকারী রাসেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। আর তার দেয়া ইস্তফাপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আর সেবাগ্রহীতাদের ঘুষের টাকার লেনদেনর যথাযথ প্রমাণ দিলে টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।