রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা ও সূত্রাপুর থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।
মামলা তিনটির অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে মিরপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদার, রামপুরার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়া ও সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি নিহত হন।
৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ নিয়ে ৩২টি মামলা হলো। এর মধ্যে ২৯টি হত্যার অভিযোগে, ১টি গণহত্যা, ১টি অপহরণ ও ৪টি গুলি করার অভিযোগে মামলা।
মিরপুর থানায় ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহত ফিরোজ তালুকদারের স্ত্রী রেশমি আক্তার।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি মিরপুর গোলচত্বর-১০ এলাকায় অবস্থান করা ফিরোজ তালুকদারের গায়ে লাগে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রামপুরা থানায় রাসেল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল আহমেদ, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহামুদ, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ, রামপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, রামপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহিন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হোসেন, র্যাব-১০-এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন, মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম, মতিঝিল বিভাগের এডিসি সাব্বির রহমান, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান ও এসআই কাউসার আহম্মেদ খান।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, তাঁর স্বামী রাসেল মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। রাসেল মিয়ার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। কোটাবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে রাসেল মিয়া অংশ নিয়েছিলেন। গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে রামপুর গোলচত্বরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি, তথা যৌথ বাহিনীর ছোড়া গুলি রাসেল মিয়ার বুকে লাগে। পরে তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সূত্রাপুর থানায় এলেম আল ফায়দি হত্যার অভিযোগে মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে জুনিয়র টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল আলম।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, সরকারি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিরাজ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম, মোয়াজ্জেম, জুয়েল, জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, ফারহান লাবিব, সাজবুল, ইব্রাহিম সালিন, মীর মুকিত, অর্জুন বিশ্বাস, মাহিমুর রহমান, মিনুন মাহফুজ ও শাহরুখ আলম।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনাসহ অন্য ব্যক্তিদের নির্দেশে সেদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাসহ পুলিশ নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়ে। এতে এলেম আল ফায়দির মাথায় গুলি লেগে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।