ময়মনসিংহ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ২০ জুলাই গুলি লেগে নিহত হন বিপ্লব হাসান (২০)। সে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের চুড়ালি গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে।
অসহায় হতদরিদ্র পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় আজ রবিবার সকালে গৌরীপুর উপজেলা ‘বসুন্ধরা শুভসংঘের’ সদস্যরা তার বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারকে সহানুভূতি ও মা-বাবার হাতে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ এবং নিহতের ভাইবোনদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী তুলে দেন।
খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল ৫০ কেজি চাল, সয়াবিন তেল, সাবান, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডাল। এছাড়া নিহত বিপ্লবের ভাই বোনের জন্য ২০টি খাতা ও দুই ডজন কলম দেয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা পরশ মনি, কার্যনির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর ইসলাম সাব্বির ও আফ্রিদি হাসান নিরব।
জানা যায়, স্থানীয় মোজাফ্ফর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে বিপ্লব।
দুই বোনের মধ্যে একজন অষ্টম ও আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে সকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গুলি লেগে বিপ্লবসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপ্লবকে মৃত ঘোষণা করে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিপ্লবের বাবা বাবুল মিয়া স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় কিষানি মিলে পার্টটাইম কাজ নেয় বিপ্লব। মিল বন্ধ থাকলেও বাড়তি আয়ের আশায় সকালে মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বের হয়।
পরে মিলে যাওয়ার সময় সংঘর্ষের ভেতর পড়ে গুলিবিদ্ধ হন।
বিপ্লবের মা বিলকিস আক্তার জানান, তাদের মাত্র দুই শতাংশ জমি ও ঘরভিটে আছে। আয়ের একমাত্র পথই ছিল বিপ্লব। এখন কি হবে তা নিয়ে দিশেহারা তারা।
খাদ্যসামগ্রী পেয়ে বিলকিস আক্তার বলেন, ‘আপনেরা আমার ছেলের জন্য আমাদের খোঁজ নিতে আইছেন এইডা আমার বড় পাওনা। তয় আমার ছেলেরে যারা বিনা কারণে গুলি কইর্যাজ মারছে, তার বিচার চাই।
বাবা বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ দেই বসুন্ধরা শুভসংঘকে। তাদের এই সহানুভূতি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ‘
বগুড়া: বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শ্রমজীবী দুই পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। রবিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন বসুন্ধরা শুভসংঘ বগুড়া জেলা শাখার সদস্যরা।
বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের বানদীঘি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন আব্দুল মান্নান (৫৮)। নয় সদস্যর পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য রিকশা চলাতেন তিনি।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কিন্তু বাড়ির এতো সদস্যর খাবার সংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে রিকশা নিয়ে বের হন মান্নান। বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকায় একদিকে ছাত্র জনতা, অন্যপাশে পুলিশের অবস্থান। এর মাঝখানে পড়েন তিনি। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মান্নান। এখন সন্তানদের নিয়ে নিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে মান্নানের স্ত্রী হাসনা বেগমের। বিষয়টি জানার পর বসুন্ধরা শুভসংঘ তার বাড়িতে হাজির হয় খাদ্য সহায়তা নিয়ে।
২৫ কেজি চাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুরের ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ, তিন কেজি আলু, দুই কেজি আটা ও কিছু সবজি দেওয়া হয় ওই পরিবারের সদস্যদের হাতে।
তাদের প্রতিবেশী জাহানারা বেগম বলেন, একে তো পরিবারের কারো কুনু আয়-উপার্জন নাই, তার ওপরে তিনডা মেয়েছ্যোল আছে। মাটির লড়বরে ঘরোত থাকে তারা। সংসার চালাবি কী করে, আর মেয়েগুলোর গতিই বা কী হবি, সেডেই এ্যাকন চিন্তের কতা।
একই ইউনিয়নের বানদীঘি ইসবপুর পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন রিপন মিয়া (৩৮)। শ্রম বিক্রি করে তিন সদস্যর সংসার চালতো তার। ৪ আগস্ট কোনো কাজ না পাওয়ায় এলাকার লোকজনের সঙ্গে আন্দোলন দেখতে শহরে যান রিপন। এরপর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
তার স্ত্রী সাবিনা বেগব বলেন, মানুষটা না থাকায় হামরা মাও-ব্যাটা অ্যাকট দরিয়াত পড়ছি। ব্যাটা (ছেলে) বড় হলে না হয় আয়-রোজগারের চিন্তে থাকল নাহিনি। জায়গা-জমিন কিচউ নাই, কী করে যে দিন পার হয় তা ভাবেই পাচ্চিনে।
এই দুই নিহতের অসহায় পরিবারে খাদ্য সহায়দা প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া আদর্শ কলেজের সহকারি অধ্যাপক হারুন আর রশিদ, বগুড়া শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক আশফাক উর রহমান চন্দন, সহ-সাধারণ সম্পাদক রায়হান সিদ্দিকী সজল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনর রশীদসহ অন্যান্য শুভার্থী।