দেশের প্রথম আইটি পার্ক ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের’ নাম পরিবর্তন করে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক রাখার দাবি জানিয়েছে
প্রতিষ্ঠানটির ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার (১৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় পার্কের খোলা চত্বরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন’ (এসএইচএসটিপিআইএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও টেকনোলজি পার্কের প্রধান ভবনের (এমটিবি) নাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালসে (বিইউপি) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধর নামে করতে চান তারা।
এসএইচএসটিপিআইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইটি পার্কটির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও পার্কটির বর্তমান দায়িত্বে থাকা কোম্পানি টেকসিটির সঙ্গে সম্পাদিত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে নিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহজালাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন এবং সংগঠনের সভাপতি আহসান কবীর।
দেশের প্রথম আইটি পার্কের যাত্রা শুরু হয় যশোরে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নামে পার্কটির নামকরণ করা হয়। শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একরের জমিতে তৈরি হয় পার্কটি। পার্কের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
উদ্বোধনের পরে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের হাতছানি দিলেও সেই আইটি পার্ক বিনিয়োগকারীদের কাছে ক্ষোভ আর হতাশার নাম।
বর্তমানে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছেন পার্কটির বিনিয়োগকারীরা। একটিমাত্র বিদেশি কোম্পানি এই পার্কে জায়গা বরাদ্দ নিলেও তিন বছর আগে সেটিও চলে যায়। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথমদিকে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টির মধ্যে ২৬টি কোম্পানি পার্ক ছেড়ে চলে গেছে। অবশিষ্ট সাতটি কোম্পানিরও রুগ্ন দশা।
বর্তমানে অপারেশনে থাকা হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি বা বিপণন নিয়ে কাজ করে। অবশিষ্ট কোম্পানিগুলো ই–কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবাদানকারী, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই ৩০৫ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় টেকসিটি নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে। এই পার্ক থেকে অর্জিত রাজস্বের ৮২ শতাংশের ভাগীদার টেকসিটি; যাদের কোনও বিনিয়োগই নেই। বাকি সরকারের প্রাপ্য ১৮ শতাংশেরও বড় অংশ টেকসিটি নানা কারসাজির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে।
সংবাদ সম্মেলনে বাকি দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে- পার্কের স্পেস ভাড়া যশোরের বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করতে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা; ভৌতিক বিদ্যুৎ বিলসমূহ প্রত্যাহার করে ব্যবহার অনুযায়ী বিল ইস্যু করা; স্থানীয় ও ক্ষুদ্র-মাঝারি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সরকারি কাজে অংশগ্রহণের সুযোগদান; ব্যবসা প্রসার ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এই পার্কের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ; হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটি থেকে ওয়াহিদ শরীফকে অপসারণ করে তার স্থলে পার্কের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদের দাবি যে যৌক্তিক, তা অনুধাবন করেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি মেনে নিতে তারা আন্তরিকও বটে। কিন্তু পতিত সরকারের অলিগার্ক ওয়াহেদ শরীফদের দৌরাত্ম্যে সরকারি কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পার্কে টেকসিটির আরও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরার সঙ্গে নানা সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ডকুমেন্টও সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করা হয়।
শেখ হাসিনার নামে পার্কটি হওয়ায় এবং এটির পরিচালনায় সাবেক সরকারের সুবিধাভোগীরা থাকায় স্থাপনাটি আক্রোশের মুখোমুখি হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অন্তত তিন দফা এখানে আক্রমণের ঘটনায় ভাঙচুর করা হয়েছে।