ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি কোয়ার্টারে থেকেও সময় মতো ভাড়া দেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। মাসের পর মাস বিনা ভাড়ায় বাস করছেন সরকারি বাসায়।
আবার কেউ কেউ অন্য জেলায় বদলি হলেও কোয়ার্টারের ঘর নিজ দখলে রেখেছেন। আর এসব জেনেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন এভাবে চলে এলেও নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা।
কোয়ার্টার বরাদ্দ-সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সদর উপজেলা পরিষদে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বাসভবন বাদে পাথরাজ, শুক, সেনুয়া ও টাংগন নামে ১৪টি দ্বিতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই বাসাগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে বাসা ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে। এবং যারা অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেছে তারা ঘর নিজ দখলে রেখেছেন। তাদের বারবার নোটিশ দেওয়ার পরেও ঘর ছাড়ছেন না। এমতাবস্থায় বেকায়দায় পড়েছে উপজেলা কর্তৃপক্ষ।
সরকারি কোয়ার্টারে তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলার এলজিউডি’র কার্য-সহকারী আবু সাঈদ মো. করিম, উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাবুদ হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসের গার্ড মো. বাবুল আক্তার, উপজেলা কৃষি অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. মুঞ্জুর আলম, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস সহায়ক মো. রবিউল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস সহকারী মো. সফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র রায়, উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সিএ কাম-উচ্চমান সহকারী রেবা খাতুন, উপজেলা এলজিউডি’র সার্ভেয়ার মো. মফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. মুন্না, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাত হোসেন, বিআরডিবি’র জুনিয়র অফিসার (হিসাব) মো. আবদুল হাই আল হাদী ও যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর জহির রায়হান।
প্রতিমাসে বাসা ভাড়া ৩ হাজার টাকা হলেও নিয়মিত কেউ ভাড়া পরিশোধ করেন না। তার মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস সহকারী মো. সফিকুল ইসলামের বকেয়া রয়েছে ৭২ হাজার টাকা, মাবুদ হোসেনের ১৫ হাজার টাকা, আবু সাঈদের ১২ হাজার টাকা, বাবুল আক্তারের ৬ হাজার টাকা, মঞ্জুর আলমের ৬ হাজার টাকা, রবিউলের ১২ হাজার টাকা, বিপ্লব চন্দ্রের ৬ হাজার টাকা, রেবা খাতুনের ৯ হাজার টাকা, মফিজুর রহমানের ১৫ হাজার টাকা, মুন্নার ৬ হাজার টাকা, সাজ্জাতের ৬ হাজার টাকা, হাদীর ৯ হাজার টাকা ও জহির রায়হানের ৬ হাজার টাকা।
তবে উপজেলা এলজিউডি’র সার্ভেয়ার মো. মফিজুর রহমান পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ও এলজিউডি’র কার্য-সহকারী আবু সাঈদ মো. করিম নীলফামারীর খানসামায় বদলি হলেও এখন পর্যন্ত তারা দুজনেই কোয়ার্টার ছাড়েননি। এখনও তারা বাসা দুটি দখলে রেখেছেন। এ নিয়ে অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এলজইডি’র দুই কর্মকর্তাকে এর আগে কয়েক দফা ঘর ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তারা নোটিশের কোনো জবাব না দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সবশেষ গত বছরের ৬ নভেম্বরে আবারও ঘর ছাড়ার নোটিশ দেয় উপজেলা প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষ।
তবে বারবার আবেদন করেও ঘর না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা জানান, অনেকেই বদলি হওয়ার পরেও ঘর দখলে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ বছরের পর বছর ভাড়া পরিশোধ না করেই বসবাস করছেন। যারা ঘর ছাড়েন না তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানান তারা।
উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসের একটি সূত্র বলছে, অনেক আগে রেজুলেশনের মাধ্যমে গেজেটেড কোয়ার্টারের ভাড়া ৩ হাজার টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়। অনেকে ঠিকমতো এই ভাড়াও দেন না বলে অভিযোগ। ফলে পরিষদ প্রতি মাসে অনেক টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ঘর না ছাড়ার প্রসঙ্গে মফিজুর রহমান ওন আবু সাঈদ মো. করিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা উপজেলা প্রকৌশলীকে দেখিয়ে দেন।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বলেন, উপজেলা কোয়ার্টারে ১৪টি পরিবার আছে। তার মধ্যে দুইজন এরইমধ্যে বদলি হয়ে গেছে। যারা বদলি হয়েছে তাদের ঘর ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর যাদের বাসা ভাড়া বকেয়া রয়েছে তাদের দ্রুত সময়ে পরিশোধ করার জন্য বলা হয়েছে। এর পরেও যদি কেউ ভাড়া বা ঘর না ছাড়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।