উপমহাদেশের অন্যতম মহাতারকা শবনম। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ (১৭ আগস্ট)। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- দুই দেশেই সমানতালে জনপ্রিয় তিনি। তবে বাংলাদেশে ‘আম্মাজান’ সিনেমায় অভিনয় ছিল তাঁর শেষ কাজ।
এরপর বাংলাদেশি সিনেমায় আর তাকে দেখা যায়নি।
১৯৪৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় জন্মেছিলেন অভিনেত্রী শবনম। অভিনেত্রীর আসল নাম ঝর্ণা বসাক। শুধু অভিনয় নয, নাচেও বেশ পারদর্শী এই তিনি। শৈশবে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচ শেখেন। ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।
এক অনুষ্ঠানে শবনমের নৃত্য দেখে তাকে সিনেমায় নাচের সুযোগ করে দেন বরেণ্য নির্মাতা এহতেশাম। সেই সঙ্গে আরও কিছু সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পান তিনি। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ সিনেমায় প্রথম নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন শবনম।
এ সিনেমাতেই ‘শবনম’নামটি ধারণ করেন তিনি। সিনেমাটি তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার সুবাদে হয়ে ওঠেন দর্শকদের প্রিয় নায়িকা। এরপরের বছরই উর্দু সিনেমায় অভিষেক হয় তার।
‘চান্দা’সিনেমায় অভিনয় করে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শবনম। এরপর টানা নব্বই দশক পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। মাঝে বাংলাদেশ হয়েছে স্বাধীন। কিন্তু পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ, কোথাও শবনমের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। ষাটের দশকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন শবনম। এ কারণে ১৯৬৮ সাল থেকে লাহোরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি।
১৯৫৮ সালে বাংলা ভাষায় শুরু ক্যারিয়ার বাংলা ভাষাতেই শেষ করেন ১৯৯৯ সালে ‘আম্মাজান’ দিয়ে। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ওই ছবিতে একজন মায়ের চরিত্রে শবনমের অভিনয় ছিলে এক কথায় অনবদ্য। সেখানে উপস্থিতি অভিনয় যেমন দর্শককে কাঁদিয়েছিল, তেমনই ছবিটিও হয়েছিল ব্যবসাসফল।
আক্ষেপের বিষয়, এত জনপ্রিয়তা পেলেও এ কিংবদন্তিকে আর কোনো বাংলা সিনেমায় পাওয়া যায়নি। কেন? অনেকেই মনে করেন কোনো এক অভিমানে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। আসলেই কি তাই?
বছর দুয়েক আগে বছর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইফতার পার্টিতে হাজির হয়ে তিনি জানিয়েছিলেন সেই অজানা কথা।
শবনমের ভাষায়, ‘‘আম্মাজান’ করার পর ভালো কোনো চরিত্র পায়নি। তাই ক্যামেরার সামনেও দাঁড়াইনি। ইচ্ছা থাকলেও মনের মতো চিত্রনাট্য না পাওয়াতে আর কাজ করা হয়নি। ’’
শবনম অভিনীত উল্লেখযোগ্য বাংলা সিনেমাগুলো হচ্ছে—‘আমার সংসার’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘আম্মাজান’, ‘কখনো আসেনি’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘নাচের পুতুল’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সহধর্মিণী’ ইত্যাদি।