সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর দুই মহাকাশচারী। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছেন তারা। এমন অবস্থায় আটকে পড়া দুই নভোচারীর ভাগ্য কী হবে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের ফেরাতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও সময় লেগে যেতে পারে।
কিন্তু এতোদিন মহাকাশে থাকলে কী কী বিপদ ঘটতে পারে তাদের?
এ বিষয়ে নাসা জানাচ্ছে, মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকলে মাইক্রোগ্র্যাভিটি এবং বিকিরণের মতো নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর। মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতির কারণে উল্টো পথে উপরের দিকে বইতে শুরু করে শরীরের তরল। এর ফলে মুখে ফোলাভাব, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পায়ে তরলের অভাবের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তারতম্য দেখা দেয় রক্তচাপেও। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে মহাকাশে থাকা যে কোনও মানুষের পক্ষেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় গ্যালাকটিক মহাজাগতিক রশ্মি এবং বিবিধ সৌর কণার বিকিরণের সংস্পর্শে আসায় বেড়ে যায় ক্যানসারের ঝুঁকিও। যাতে ডিএনএ-ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে অভিকর্ষের অভাবে মস্তিষ্কের সংবেদনশীল ইনপুটে হেরফেরেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে চোখ ও হাতের সমন্বয়েও গোলমাল দেখা দিতে পারে। এছাড়াও একটানা মহাকাশে থাকলে হতে পারে ‘স্পেস সিকনেস’। দেখা দিতে পারে বমিভাব, বিভ্রান্তির মতো নানা উপসর্গ। ইতোমধ্যে সে সব সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করেছেন সুনীতা এবং বুচ। তাদের পেশি শিথিল হয়ে এসেছে। হাড়ও দুর্বল হচ্ছে ক্রমশ। তবে নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুনীতারা রয়েছেন খোশ মেজাজেই।
মহাকাশযান বোয়িং সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে গত ৫ জুন মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ওই দুই নভোচারীর পাড়ি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে। যদিও শুরুতে কথা ছিল, দিন কয়েক পরেই ফিরছেন সুনীতারা। যদিও আচমকা মহাকাশযানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ার আগেই স্টারলাইনার ওড়ার আগেভাগেই রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিলো।
যাত্রাপথে আরও নানা যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। রকেটের পাঁচটি ‘ম্যানুভরিং থ্রাস্টার’ খারাপ হয়ে যায়। সমস্যা দেখা দেয় একটি ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও। সবমিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সুনীতাদের ফেরা। আপাতত নাসার ইঞ্জিনিয়ারেরা মহাকাশযানের যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধানের জন্য দিনরাত কাজ করছেন। দুই মহাকাশচারীকে ফেরাতে সাহায্য নেওয়া হবে স্পেস এক্স মহাকাশযানের।
নাসার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তাদের ফেরাতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও সময় লেগে যেতে পারে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে আগামী বছরের শুরুতেই স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগনে পৃথিবীতে ফিরবেন তারা; এমনটাই আশা করা হচ্ছে।a