সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সামলানোর ক্ষেত্রে কিছু ভুল হয়েছে। একেবারে আন্দোলনের শুরু থেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সরকারের আলোচনা করা এবং কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত ছিল।
আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) ভারতের ইংরেজি দৈনিক দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা এবং বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরুতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। কোটা কমানোর বিষয়ে আমাদের সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। আদালত ভুল করেছে এবং আমরা কোটা চাই না বলে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সরকার সেটা শোনেনি এবং বিচারব্যবস্থাই বিষয়টি সামলাবে বলে প্রত্যাশা করেছিল। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এর পেছনে জড়িত ছিল। কারণ ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারী আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ছিল। গত ১৫ বছরে আমাদের জঙ্গিবাদের সফল নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন। শুধু একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাই দেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করতে পারে। ’
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জয় বলেন, ‘পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা এক দিন আগেও তিনি বা তার মা কেউই ভাবেননি। তার (শেখ হাসিনা) দেশ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং জনগণের উদ্দেশে দেওয়া বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেবেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি বিবৃতিটির খসড়া তৈরি করছিলেন এবং সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সব কিছু পরিকল্পিত ছিল।
তিনি রেকর্ডিং শুরু করতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ম্যাম, সময় নেই। আমাদের এখনই যেতে হবে। বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সামরিক বিমানঘাঁটির একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। তারা সেখানে একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত করে রেখেছিল। কিন্তু তিনি যেতে চাননি, সেই সময় আমার খালা (শেখ রেহানা সিদ্দিক) আমাকে টেলিফোন করেন। আমি মাকে বোঝালাম যে তোমার নিরাপত্তার জন্যই তোমাকে চলে যেতে হবে। যদি এই জনতা তোমাকে খুঁজে পায়, কোথাও তোমাকে ধরে ফেলে এবং সেখানে গুলি চলে, তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে। হয় তোমাকে এই হত্যার জন্য দায় দেবে কিংবা যদি তোমাকে ধরে ফেলে তাহলে মেরে ফেলবে। তাই তোমার সবচেয়ে ভালো হবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। এবং আমিই তাকে চলে যেতে রাজি করিয়েছি। তিনি বাংলাদেশে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপাতত তিনি ভারতে থাকবেন। ’
শেখ হাসিনার অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাকে হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে। তাই তার একমাত্র গন্তব্য ছিল ভারত। তার জীবন বাঁচানোয় এবং তাকে অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদির সরকারকে ধন্যবাদ। তারা দ্রুত সাড়া দিয়েছে, তাই তিনি নিরাপদ আছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে তার আশ্রয়ের আবেদন করার বিষয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তার সবগুলোই গুজব। এসব একেবারে মিথ্যা। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেননি। ’
ভারতের প্রতি তার বার্তা কী হবে, জানতে চাইলে জয় নয়াদিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করব, ভারত নিশ্চিত করবে যে ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অরাজকতা বন্ধ হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের অনুমতি দেওয়া হবে। যদি সেটা নিশ্চিত করা হয়, আমি এখনো নিশ্চিত যে আমরা নির্বাচনে জয়ী হব। আমরা এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। ’
এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি ভারতে যেতে চান। তবে কখন তিনি যেতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়।