কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজের ৩১ বছর বয়সি এক নারী ডাক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যর্থ হলে সিবিআই’র (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) হাতে মামলাটি হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
সোমবার (১২ আগস্ট) ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর মমতা বলেন, ‘এ ঘটনায় যদি আরও কেউ অভিযুক্ত থাকে এবং তাদেরকে আগামী রোববারের মধ্যে গ্রেফতার করা না যায়, তাহলে সিবিআই মামলাটির তদন্ত করবে।’
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, মমতার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরে জানান, এরইমধ্যে মামলাটির সমাধানে পুলিশের পক্ষ থেকে রূপরেখা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে, যদি আরও কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা একটি হেল্পলাইন চালু করেছি। ডাক্তাররা পরিচয় গোপন করে ফোন করে তথ্য দিতে পারবেন। যদি কারও প্রতি তাদের সন্দেহ হয় জানাতে পারবেন।’
এদিকে ওই ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে কলকাতার সিভিক পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। সঞ্জয় রায়ও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমাকে ফাঁসি দেয়া হোক।’
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষেভের মুখে সকালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সন্দীপ ঘোষ।
এর আগে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের দাবি জানান। এক্স বার্তায় তিনি লেখেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে তার বিভ্রান্তিকর বিবৃতি এবং উদাসীন মনোভাব অভিযুক্তের প্রতি তার উদাসীনতা প্রকাশ করে।’
গত বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট) রাতে ট্রেইনি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ওই পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্রী। দিবাগত রাত দুইটায় বাইরে থেকে খাবার এনে নৈশভোজ সারেন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। এরপর তিনি জরুরি বিভাগ ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ তার নিথর দেহ দেখতে পান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বাড়িতে ফোনে খবর দিয়ে জানায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছুটে আসেন হাসপাতালের জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকরা। তারা অর্ধনগ্ন মরদেহ দেখে অভিযোগ করেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর এ ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর চোখ, মুখ এবং গোপনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। পাশাপাশি তার বাম পা, ঘাড়, ডান হাত, অনামিকা এবং ঠোঁট থেকেও রক্ত পড়ছে।
মামলার তদন্তকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সঞ্জয় রায় নামের ওই ব্যক্তি প্রায়ই ওই হাসপাতালে যেতেন। ঘটনার পর তিনি তার জায়গায় ফিরে এসে ঘুমাতে যান এবং পরের দিন সকালে আলামত নষ্ট করতে তার জামাকাপড় ধুয়ে ফেলেন।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে বাড়ি ওই ছাত্রীর। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এমবিবিএস পাস করার পর আর জি কর মেডিকেল কলেজে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।