Homeজেলাঅবশেষে নিয়োগ পরীক্ষায় চুড়ান্ত সেই ৪ প্রার্থী

অবশেষে নিয়োগ পরীক্ষায় চুড়ান্ত সেই ৪ প্রার্থী

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।

অবশেষে বগুড়ার শেরপুরে ছোনকা দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যলয়ের চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বিতর্কিত সেই চার প্রার্থী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফলা ফল ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচিত প্রার্থীরা হলেন প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ দিলফুজার রহমান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে সাকিবুল ইসলাম এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে জাফর ইকবাল নিশাত। এ তথ্য নিশ্চিত করেছন শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

এর আগে গত ২৮ জুন এই চার পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগে বিভিন্ন পদে মোট ৬০ লক্ষ টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার আগেই প্রধান শিক্ষক পদে ১০ লক্ষ টাকায় মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ১৬ লক্ষ টাকায় মোঃ দিলফুজার রহমান, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ১৬ লক্ষ টাকায় সাকিবুল ইসলাম ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৮ লক্ষ টাকায় জাফর ইকবাল নিশাতেকে চুড়ান্ত করার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন আবেদকারী। এদের মধ্যে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারি ফয়সাল আবির ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েও চাকরির নিশ্চয়তা না পেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এসব কথা স্বীকারও করেছিলেন ওই স্কুলের পরিচালনা কমিটির কয়েক জন সদস্য। এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। ২৮ জুন পরীক্ষার তারখি ও সময় নির্ধারন করেও উপস্থিত ছিলেন না নিয়োগ বোর্ডের কেউ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ডিজির প্রতিনিধি বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাঃ মামুন অর রশিদ ব্যক্তিগত কারনে, শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম পেটের পীড়ার কারনে ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি শেরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানিয়ে ছিলেন। এই নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলএবং স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদী খুদা তাদের ফোন বন্ধ রেখেছিলেন। পরীক্ষার্থীরা ফিরে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরিত ‘অনিবার্য কারণ বশতঃ’ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ ঝুলিয়ে দেন স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী। অবশেষে ২৬ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষায় বিতর্কিত সেই চার জনই চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারি ফয়সাল আবির বলেন,”স্কুলের সভাপতি কিছু দিন আগে আমার ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। তাই চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছি। এরপরও লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছি। পরীক্ষার হলে বুঝলাম মনোনীত প্রার্থী চুড়ান্ত করতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে। তাই আমি বের হয়ে এসেছি।”

সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারি আলমগীর হোসেন বলেন,”আমাকে প্রবেশ পত্র দেওয়া হয়নি। তাই নিয়োগ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ চেয়ে বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করেছি। গত ২৫ তারিখে আদালত নিয়োগ কমিটিকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যেই পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি আদালতের কাছে প্রতিকার চাইব।”

নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য ও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদা খুদা বলেন,”পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। সবকিছু স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না।”

স্কুলের ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নিয়োগ বোর্ডের বগুড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি শেরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলেন, “আমি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরী শুরু করা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলাম। পরবর্তীতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতে রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে টহলে বেড়িয়ে যাই। এর মধ্যে কোন অনিয়ম হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন,”একজন প্রার্থীর আদালতে মামলা করার কথা জেনেছি। নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সর্বশেষ খবর