ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাবেক নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির বিধবা স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠীকে সহযোগিতা ও নিজ বাড়িতে ইয়াজিদি নারীদের আটকে রাখার অভিযোগে হওয়া মামলায় বুধবার (১০ জুলাই) তার বিরুদ্ধে এই সাজা ঘোষণা করেন দেশটির একটি আদালত। খবর আল জাজিরার।
ইরাকের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের এক বিবৃতি মতে, ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ওই নারীকে সাজা দিয়েছেন পশ্চিম বাগদাদের একটি আদালত। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসকে সহযোগিতা করা এবং ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নারীদের অপহরণ ও তাদেরকে নিজ বাড়িতে আটকে রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত নারীর নাম প্রকাশ করেননি আদালত। তবে একটি বিচারিক সূত্রের বরাতে তার নাম আসমা মোহাম্মদ বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। আদালতের এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, তাকে ‘ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত ও কার্যকর হওয়ার জন্য একটি আপিল আদালতে রায়টি অবশ্যই অনুমোদিত হতে হবে।
২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আকস্মিক উত্থান ঘটে। সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে শুরু করে ইরাকের দিয়ালা পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলজুড়ে ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা ও সেই সঙ্গে নিজেকে তার ‘খলিফা’ বলে ঘোষণা দেন গোষ্ঠীটির তৎকালীন নেতা আবু বকর আল বাগদাদি।
বাগদাদি ও তার সঙ্গীরা যখন উত্তর ইরাকের মধ্যদিয়ে বিদ্যুতের গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন ব্যাপক নিধনযজ্ঞের শিকার হন ওই অঞ্চলের ইয়াজিদি সম্প্রদায়। আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার ইয়াজিদি পুরুষকে হত্যা করে এবং নারীদের যৌনদাসী হতে বাধ্য করে।
শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনাল ও ভয়েস অফ ইজিদিসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ১০ বছরেরও বেশি সময় পরও ওই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরা আইএসে-এর আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লড়াই করছে এবং তাদের ২ লাখেরও বেশি এখনও বাস্তুচ্যুত।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পশ্চিম ও পূর্ব মিলিয়ে ৮৭টি দেশের সমন্বয়ে ‘কমবাইন্ড জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স’ গঠন করে। এই জোট একটানা পাঁচ বছর সিরিয়া ও ইরাকে আইএস-এর অবস্থান লক্ষ্য করে হাজার হাজার বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শত শত আইএস সন্ত্রাসী নিহত হয়। আরও কয়েক হাজার সন্ত্রাসী আটক হয়।
২০১৭ সালের মধ্যে ইরাকের দখলকৃত সব এলাকা থেকে বিতাড়িত হয় আইএস। ওই সময় গোষ্ঠীটির সদস্য হওয়ার অভিযোগে ইরাকের আদালতে দণ্ডবিধির আওতায় কয়েকশ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫০০ জনের বেশি বিদেশি নারী ও পুরুষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটন দাবি করে, তাদের হামলায় আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হয়েছেন। এরপর আল-বাগদাদির চারজন স্ত্রী ছিল বলে জানা যায়। তার মৃত্যুর কয়েকদিন পর তুরস্ক জানায়, তারা বাগদাদির স্ত্রী ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের একজনকে বন্দি করেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইরাক সরকার ঘোষণা দেয়, তারা বাগদাদির পরিবারকে তুরস্ক ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে। ওই সময় সৌদি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল আল আরাবিয়াতে বাগদাদির স্ত্রীর এক সাক্ষাৎকারও প্রচারিত হয়। সেখানে বাগদাদির স্ত্রীর নাম আসমা মোহাম্মদ বলে উল্লেখ করা হয়।