বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল দল ব্রাজিল। সাফল্যের বিচারে ব্রাজিলের সঙ্গে তুলনীয় দল নেই বললেই চলে। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জেতার রেকর্ড ব্রাজিলেরই। সুন্দর ফুটবলের তীর্থস্থান হিসেবেই পরিচিত ব্রাজিলের সময়টা অবশ্য ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে যেন জিততেই ভুলে গেছে তারা। নতুন কোচ দোরিভাল জুনিয়রের কৌশলের সঙ্গে এখনও পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারেনি সেলেসাওরা।
চলতি কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। নিজেদের গ্রুপে কলম্বিয়ার পেছনে থেকে রানার্স আপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আসরের নয়বারের চ্যাম্পিয়নরা। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের সফলতম দল উরুগুয়ে। চলতি আসরে দারুণ ফর্মে আছে উরুগুয়ে। গ্রুপ পর্বে খেলা তিন ম্যাচেই জয় পেয়েছে তারা।
উরুগুয়ের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ব্রাজিল। কোপা আমেরিকার আগে গত বছর শেষবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুদল। সেই ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়ে দিয়েছিল উরুগুয়ে। তবে সে সময় ব্রাজিলের ডাগআউটে ছিলেন না বর্তমান কোচ দোরিভাল জুনিয়র। দোরিভাল শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলকে উরুগুয়ের চ্যালেঞ্জ পার করাতে পারবেন কিনা তা দেখার বিষয়। কিন্তু আপাতত ৬২ বছর বয়সি এই কোচ আলোচনায় তার গায়ের জ্যাকেটের জন্য।
এবারের কোপায় ব্রাজিলের কোচ দোরিভালের গায়ের জ্যাকেট নজর কেড়েছে। নজর কাড়ার পেছনে অবশ্য বিশেষ একটা কারণ আছে। পাঁচবারের বিশ্বজয়ী কোচের জ্যাকেটে যে দেখা যাচ্ছে চারটি তারকা।
সাধারণত জার্সিতে থাকা তারকাগুলো দলগুলোর বিশ্বকাপ শিরোপার সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন জার্মানির জার্সিতে চারটি ও আর্জেন্টিনার জার্সিতে তিনটি তারকা আছে। তেমনই ব্রাজিলের জার্সিতেও আছে পাঁচটি তারকা। কিন্তু কোচ দোরিভালের চার তারকা জার্সি পরার পেছনের রহস্যটা কী?
দোরিভালের চার তারকা জার্সির পেছনে আছেন ব্রাজিলের ফুটবলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নাম মারিও জাগালোর স্মৃতি। বৃদ্ধ নেকড়ে খ্যাত মারিও জাগালোর বড় এক ভক্ত দোরিভাল জুনিয়র। তাই জাগালোর স্মৃতিধন্য জ্যাকেট পরেই ডাগআউটে দাঁড়ান তিনি।
ব্রাজিলের জেতা পাঁচটি বিশ্বকাপের চারটির সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে জাগালোর নাম। খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় প্রথম বিশ্বকাপজয়ী জাগালো খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের হয়ে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ এর বিশ্বকাপ জিতেছেন। এরপর কোচ হিসেবে জেতেন ১৯৭০ এর বিশ্বকাপ। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের সময়ও তিনি ব্রাজিলিয়ান দলের কোঅর্ডিনেটর ছিলেন।
১৯৯৮ সালে ফের ব্রাজিলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে যান জাগালো। সেই আসরেও ব্রাজিলকে ফাইনালে তুলে কোচ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে জিদান ম্যাজিকে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হারে ব্রাজিল। সেই বিশ্বকাপে এই চার তারকা জ্যাকেট পরেই ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন জাগালো। ২৬ বছর পর সেই জ্যাকেট পরে ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে জাগালোর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন দোরিভাল জুনিয়র।
তবে জাগালোর সাফল্যের পুনরাবৃত্তি দোরিভাল করতে পারবেন কিনা, তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ২২ বছর আগে শেষবার বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল গত পাঁচ আসরে মাত্র একবার সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছে। বাকি চার আসরেই তারা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ে। এছাড়া ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকায় শেষবার শিরোপা জেতে তারা। ২০২১ সালে গত আসরে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরে রানার্সআপ হয় তারা।