ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছেন সংস্কারপন্থি প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। ৬৯ বছর বয়সি পেজেশকিয়ান ইরানে একটি বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি প্রচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার (৬ জুলাই) বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানে দ্বিতীয় দফার ভোটের মধ্যে ৫৩ দশমকি ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন পেজেশকিয়ান। অন্যদিকে সাইদ জলিলি পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
ইরানের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তিন কোটির বেশি ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোট। আর সাইদ জলিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট।
মাসুদ পেজেশকিয়ান একজন হৃদ্রোগবিষয়ক সার্জন। তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সাইন্সের সাবেক প্রধান ছিলেন। এটি ইরানের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মেডিকেল প্রতিষ্ঠান।
ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। দেশটির প্রধান সংস্কারপন্থি জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক দুই সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
পেজেশকিয়ান এর আগে ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
ইরানের ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে রয়েছে। পেজেশকিয়ান বিজয় পাওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন।এবার পেজেশকিয়ান নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আলোচনায় আসেন। কট্টরপন্থিরা তার সমালোচনায় মুখর হন। অপরদিকে বহির্বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের আশা জাগায় অনেক ইরানি তার সমর্থন করেন।
কট্টরপন্থিদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন মাসুদ পেজেশকিয়ান।
ফলাফল ঘোষণার পর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রথম বক্তব্যে পেজেশকিয়ান ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার প্রতি ভালোবাসা এবং সাহায্য করতে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমরা সবার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেব; আমরা সবাই এ দেশের মানুষ; আমাদের দেশের অগ্রগতির জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার মৃত্যুর পর ইরানে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করা হয়।
গত শুক্রবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ধাপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ৬ কোটি ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট দেন।
প্রথম দফার ভোটে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। অন্যদিকে সাইদ জলিলি পান ৪০ শতাংশ। তেহরানের রক্ষণশীল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ ১৪.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। নিয়ম অনুযায়ী দশটিতে শুক্রবার (৫ জুলাই) দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।