আগের ম্যাচে জমজমাট এক লড়াই দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। জার্মানিকে বিদায় করে ইউরো চ্যাম্পিয়শিপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে স্পেন। রাতের আরেক ম্যাচে ফ্রান্সের মুখোমুখি হয় পর্তুগাল। এই ম্যাচও ছিল দারুণ জমজমাট। যেন ম্যাচের প্রতিটি পরদে পরদে ছিল উত্তেজনা। দুই দলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ধীরে ধীরে জমে ওঠতে থাকে তাদের লড়াই।
যদিও প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও একের পর এক আক্রমণ করে কাঙ্খিত গোল পায়নি কোনো দল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে পর্তুগালকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় ফ্রান্স।
তবে এই ম্যাচে হেরে ইউরো মঞ্চকে বিদায় জানিয়েছেন রোনালদো। রঙহীন বিদায়ের ম্যাচে দেখা গেল এক বিধ্বস্ত, হতাশাগ্রস্ত তারকাকে। এত শক্তপোক্ত একটা মানুষকে কী এই সাজে মানায়! তবুও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসতো মেনে নিতেই হবে। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারতে হলো টাইব্রেকারে। জোয়াও ফেলিক্সের ওই শটটি যদি পোস্টে না লাগতো তাহলে হয়তো ম্যাচের চিত্রটা অন্যকিছু হলেও হতে পারতো। তবে এটিই হয়তো ইউরোতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শেষ ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত তাকে ইউরোর মঞ্চটা ছাড়তে হলো পরাজিত নায়ক হয়েই।
এদিন খেলার শুরুতে তেমন একটা আক্রমণ করতে দেখা যায়নি কোনো দলকেই। প্রথমার্ধে বলার মতো কোনো সুযোগও তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। ফলে প্রথমার্ধ শেষ হয় সমতায়। প্রথমার্ধে ৫৬ শতাংশ বল দখলে রেখে ফ্রান্সের পোস্টে শট নেয় মাত্র দুটি, যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল না কোনোটিই। অন্যদিকে ৪৪ শতাংশ বল দখলে রেখে ফ্রান্সের শট ছিল মাত্র ৩টি। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র একটি।
ম্যাচের শুরুটা ছিল সাদামাটা। দুই দলই খেলতে থাকে ছন্নছাড়া ফুটবল। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথম শট নেয় ফ্রান্স। বক্সের বাইরে থেকে থিও হার্নান্দেজের শট আটকে দেয় গোলরক্ষক কোস্তা। ২৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গার শট চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৪২ মিনিটে বক্সের কাছ থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি কিক চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দলই। ৫০ মিনিটে আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। বল নিয়ে একাই দৌঁড় দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে তার সহজ শটটি ঠেকিয়ে দেন পর্তুগালের গোলরক্ষক কোস্তা। ৬১ মিনিটে ভাল একটি শট নেন জোয়াও ক্যানসালো। তবে তার শটটি দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইগনান।
দুই মিনিট পর আবারও ফ্রান্সের ডেরায় হানা দেয় পর্তুগাল। রাফায়েল লিওর বাঁ পাশ থেকে ক্রস করা বলটি ফ্রান্সের জালে জড়াতে ব্যর্থ হন ভিতিনহা। ৭০ মিনিটে পর্তুগালের ডেরায় আক্রমণ চালায় ফ্রান্স। তবে সে যাত্রায় ব্যর্থ হন কামাভিঙ্গা। দ্বিতীয়ার্ধে এভাবেই একের পর চেষ্টা চালিয়েও গোলের দেখা পায়নি দুই দল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও একের পর আক্রমণ চালাতে থাকে দুই দলই। তবে গোল পায়নি কোনো দলই। যার ফলে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের ডেরায় আক্রমণ অব্যাহত রাখে দুই দল। তবে অতিরিক্ত সময়েও বারবার চেষ্টা চালিয়ে কোনো গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। যে কারণে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নিতে আসেন দেম্বেলে। প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন এই ফুটবলার। পর্তুগালের হয়ে প্রথম শটেই লক্ষ্যভেদ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় শটে গোল করেন ফোফানা। দ্বিতীয় শটে গোল করেন পর্তুগালের বের্নার্দো সিলভা। পর্তুগিজ গোলরক্ষককে পরাস্ত করে তৃতীয় গোলটি করেন কুন্দে। পর্তুগালের হয়ে তৃতীয় শট নিতে আসেন জোয়াও ফেলিক্স। তার শটটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে। দলের হয়ে চতুর্থ পেনাল্টিতে গোল করেন বারকোলা। তবে পরের শটে গোল করেন পর্তুগালের নুনো মেন্দেস। পঞ্চম শটে হার্নান্দেজ লক্ষ্যভেদ করলে উল্লাসে মেতে ওঠে ফ্রান্স। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলের জয় পেয়ে সেমিতে পা রাখে ফরাসিরা।