শাহ মোঃ আব্দুল মোমেন, রৌমারী (কুড়িগ্রামি) প্রতিনিধি।।
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সাংবাদিক আনিছুর রহমান এর ওপর মাদক কারবারিদের হামলা বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ ঘুষ দাবি করেন। এ ঘটনায় খোঁজখবর নিতে থানায় গেলে তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সাখা নামের আরেক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় সোমবার (১জুলাই) অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রৌমারী থানার ওসি (তদন্ত) মুশাহেদ খানকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর আগে একই ঘটনায় রৌমারী থানার এসআই আনছুর আলীকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়।
লাঞ্ছিতের শিকার ওই সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সাখা পুলিশ সুপার বরাবর রৌমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুশাহেদ খান, এসআই আনছুর আলী, এএসআই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।
অভিযোগের এক পর্যায়ে এসআই আনছুর আলীকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয় এবং অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি গত ৯ই মে রৌমারী সার্কেল অফিসে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান।
এদিকে অভিযুক্ত সেই ৩ পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা চালান। সমঝোতায় রাজী না হওয়ায় সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সাখাকে মিথ্যা মামলায় ফঁাসানোর হুমকি দেন অভিযুক্তরা।
এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সাখা গত ২৭ জুন পুলিশ সুপার বরাবর আবারও লিখিত আবেদন করেন। অবশেষে পুলিশ সুপার সেই বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুশাহেদ খানকে কুড়িগ্রাম সদর থানায় বদলি করেন। লাঞ্ছিত সাংবাদিক অভিযোগ করেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করলেও অপর সহযোগী অভিযুক্ত এএসআই শফিকুল ইসলাম বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতে তারাবি নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সবুজের নেতৃত্বে স্থানীয় মাদক কারবারিরা সাংবাদিক আনিছুর রহমানের ওপর হামলা চালান। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রৌমারী হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনার রাতেই ওই সাংবাদিক বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে এসআই আনছুর আলী মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন। ওই এসআই বলেন, “যখন আপনে পাম (ঘুষ) দিবেন তখন আমি ফুলবো (কাজ করা), আর পাম না দিলে ঝিমায়ে থাকবো, এটা সংক্ষেপে বুঝে নিয়েন। আসামি ধরতে চিপা-চাপায় যাইতে হইবো, উপরেও কিছু দিতে হইবো।” নির্যাতিত সাংবাদিক আনিছুর রহমান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।’ এসংক্রান্তে খোঁজখবরসহ তথ্য সংগ্রহ করতে থানায় গেলে সাখাওয়াত হোসেন সাখা নামের আরেক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন।
সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) বলেন, তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মাহফুজুর রহমান সাংবাদিককে বলেন, এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।