শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
বগুড়ার শেরপুরে একটি হাই স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চুড়ান্ত করার অভিযোগে উঠেছে। জানা গেছে এই ঘটনায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার লেনদেনের তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন পদে আবেদনকারীরা। এর ফলে অন্যান্য প্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার অনীহা প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায় উপজেলার ছোনকা দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যলয়ের চারটি পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ জুন। কিন্তু এর আগেই প্রধান শিক্ষক পদে ১০ লক্ষ টাকা, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ১৬ লক্ষ টাকা, নিরাপত্তা কর্মী পদে ১৬ লক্ষ টাকা ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৮ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যfন্য প্রার্থীদের তথ্য অনুযায়ি প্রধান শিক্ষক পদে কেল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ দিলফুজার রহমান, নিরাপত্তা কর্মী পদে শফিনুর রহমান এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে মোঃ নিশাত নামে একজনের নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারি ফয়সাল আবির জানান তিনি এই পদে নিয়োগের জন্য স্কুলের সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের কাছে ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন দুই বছর আগে। এজন্য তিনি জমি ও গরু বিক্রি করেছেন। মুকুল তাকে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং সাথে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ও ব্যাংকের চেক দিয়েছেন। কিন্তু এখন ১৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিশাতকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুকুল তাকে ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন। বাকি ১০ দশ লক্ষ টাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই দেওয়ার কথা আছে।
প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছন মশিউর রহমান। তিনি জানান, তার এই পদে তিনিসহ ১০ জন আবেদন করেছন। এবিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুলের সাথে তার কথা হয়েছে। ফেরদৌস তার চাচাতো ভাই দিলফুজার রহমানকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি আরও বলেন, এখন যে রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হবে তার চাকরির মেয়াদ আছে তিন বছর। এরপর দিলফুজার রহমানকে সহকারি প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই এমনটা করা হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক পদে আরেক প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন,শুক্রবার সকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বৃহষ্পতিবার বিকাল পর্যন্ত আমাকে প্রবেশ পত্র দেওয়া হয়নি। আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তাদের নির্ধারিত প্রার্থী নিয়োগ দিতে পারবে না। তাই কৌশলে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অর্থের লেনদেন ও প্রার্থী চুড়ান্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্কুলের ম্যানেজিং অভিভাবক সদস্য আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমাকে সহ কয়েকজনকে কিছুই জানানো হয়নি। স্কুলের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফেরদৌস জামান মুকুল বলেন, গত ২২ জুন আলমগীর হোসনের বাড়িতে তার প্রবেশ পত্র পাঠানো হয়েছে। প্রার্থী চুড়ান্ত করা ও টাকা লেন দেনের কোন সত্যতা নেই। শুক্রবার নিয়ম অনুযায়ি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারি ফয়সালের কাছ থেকে নিয়োগের জন্য কোন টাকা নেইনি। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। তাকে ৮ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিয়েছি। বাঁকি টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, শুক্রবারের নিয়োগ পরীক্ষায় যেন কোন অনিয়ম না করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলা হবে। তবে নিয়োগের বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে অথবা এই চারজন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”