গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লেবানন সীমান্ত। এতে করে নতুন যুদ্ধের শঙ্কায় বিশ্ববাসী। রাত হলেই সীমান্তে বাড়ে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর হামলা-পাল্টা হামলা। এরই জেরে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে নিজেদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।
ইসরাইলি বাহিনীর মুহুর্মুহু হামলায় টিকতে না পেরে সীমান্তবর্তী ৯০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে লেবানন। এই সীমান্ত থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে থাকেন ফাতিমা বেলহাস।
তিনি জানান, যখন ইসরাইল বোমা হামলা চালায় তিনি রীতিমত ভয়ে কাঁপতে থাকেন। নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, তারা গাজাবাসীর মতো বাস্তুচ্যুত হতে চান না। নিজের ঘরে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ফাতিমা।
একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইসরাইল সীমান্তেও। ডেভিড কামারি নামের এই ইসরাইলি থাকেন সীমান্তবর্তী শহর কিরিয়াত শেমোনায়।
তিনি জানান, প্রতি রাতেই তার বাড়ির আঙিনায় গোলাবারুদ আঘাত হানে। গোলার আঘাতে তার বাড়ির বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। তার গাড়িও বিধ্বস্ত হয়েছে রকেট হামলায়। ডেভিড দীর্ঘ ৭১ বছর ধরে এখানে থাকেন। তার জন্মও এখানেই। তাই যতই হামলাই হোক না কেনো বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চান না ডেভিড।
চলতি মাসেই ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ শহর হাইফাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। আর হিজবুল্লাহর একের পর এক হামলায় সীমান্তবর্তী ৬০ হাজার ইসরাইলি বাসিন্দাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান কিরিয়াত শেমোনার মেয়র।
এদিকে বাইরুতের অনেক বাসিন্দাও নিয়ে রেখেছেন প্রস্তুতি। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যেনো যেকোনো সময় তারা দেশ ছাড়তে পারেন।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর তাদের সীমান্তে হিজবুল্লাহর উপস্থিতি সহ্য করবে না তারা।
ইসরাইলের এ হুমকির জবাবে বুধবার (১৯ জুন) এক টেলিভিশন ভাষণে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইলের কোনো জায়গাই নিরাপদ থাকবে না। হামলা সবখানে হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাইপ্রাস তাদের সাহায্য করছে। তারা তাদের বিমানবন্দর ও বিভিন্ন ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিচ্ছে ইসরাইলকে। তাই তারাও হামলা থেকে রেহাই পাবে না।’
অন্যদিকে ইসরাইল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাত নিয়ে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
শুক্রবার (২১ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, উভয় পক্ষ যেভাবে পাল্টাপাল্টি হুমকি দিচ্ছে, তাতে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
গুতেরেস আরও বলেন, একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ, একটি ভুল-বোঝাবুঝি মারাত্মক বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে; যা সীমান্ত ছাড়িয়ে আরও বহুদূর ছড়িয়ে পড়তে পারে। খোলাখুলি বললে, আমাদের কল্পনারও বাইরে। তাই স্পষ্ট করেই বলি, এই অঞ্চলের বাসিন্দা এবং পুরো পৃথিবীর মানুষ লেবাননের আরেকটি গাজায় পরিণত হওয়ার ধকল নিতে পারবে না।