আওয়ামী লীগ নেতার ঘোষিত পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কারের আশায় জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে গেলেন রেজাউল খান (৩২) নামের এক কৃষক। পরে সাপটি বন বিভাগে হস্তান্তর করতে গেলে সেটির প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে অস্বীকার করে কর্মকর্তারা। তারা জানান, সাপ ধরাই বেআইনি।
শনিবার (২২ জুন) রাতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এসে জীবিত রাসেল ভাইপারটি সাংবাদিকদের দেখান কৃষক রেজাউল। রেজাউল ফরিদপুর শহরতলীর আলিয়াবাদ ইউনিয়নের কাদেরের বাজার এলাকার মনোরুদ্দিন খানের ছেলে।
এ সময় প্রেসক্লাবের সদস্যরাসহ ফরিদপুর পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আওয়াল হোসেন তনু ও স্থানীয় অন্যান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
রেজাউল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার বিকেলে জেলা সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার ফসলি জমিতে চাষ করার সময় এ রাসেলস ভাইপারটি দেখতে পাই। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় সাপটিকে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে ভরে ফেলি। পরে প্লাস্টিকের নেটের আবরণ দিয়ে পাতিলের মুখ বন্ধ করে দিই।’
রেজাউল আরও বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছে জেনেছি, জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরতে পারলে ফরিদপুরের নেতারা পুরস্কার দেবেন। এ কারণেই জীবিত সাপটি ধরে এনেছি।’
রেজাউল পেশায় কৃষক তবে মাছ ধরার কাজও করেন। রেজাউল জানান, দুই দিন আগেও তিনি একটি রাসেলস ভাইপার সাপ মেরেছেন। বিকালে মাছ ধরতে গিয়ে এই সাপটি দেখতে পান। পরে তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে সাপটিকে ধরে ফেলেন।
ফরিদপুর পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আওয়াল হোসেন বলেন, ‘সাপ ধরার বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাপটি বন বিভাগে জমা দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যেতে বলেছেন।’
তবে রোববার (২৩ জুন) দুপুরে ওই সাপ জমা দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নেয়ার জন্য বন বিভাগে নেয়া হলে বন বিভাগ পত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, ‘সরীসৃপজাতীয় প্রাণী ধরার কোনো বিধান নেই। ধরাটাই অপরাধ। কারও জালে আটকে গেলে সে অন্য কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে পারি না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত তিনজন পুরস্কারের আশায় বন বিভাগে এক হাত লম্বা দৈর্ঘ্যের বাচ্চা রাসেলস ভাইপার জমা দেয়া চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আমরা বিপদে পড়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন জেলা আওয়ামী লীগের একটি মিটিংয়ে রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আলোচনা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার একদিন পরেই সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি।
পরদিন ২১ জুন এক সংশোধনী বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ জীবিত ধরতে পারেন তাহলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
আগের বক্তব্যটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিকৃত করে প্রকাশ হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।