Homeখেলা৩৮ এ মেসির পা, উৎসবের অপেক্ষা আর্জেন্টিনার

৩৮ এ মেসির পা, উৎসবের অপেক্ষা আর্জেন্টিনার

ফুটবল দুনিয়ায় একটি নাম আছে; যে নামটি সারাজীবন অমলিন হয়ে থাকবে। তিনি যে কিংবদন্তী, তিনিই ফুটবলের জাদুকর; ‘দ্যা ম্যাজিশিয়ান’ লিওনেল মেসি। বাঁ পায়ের জাদুতে মোহিত করেছেন সারা বিশ্বকে। ফুটবলকে দিয়েছেন পূর্ণতা দিয়েছেন। যুব বিশ্বকাপ, অলিম্পিকে স্বর্ণ, লিগের সম্ভাব্য সব ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা আমেরিকা, লা ফিনালিসিমা, বিশ্বকাপ এবং একে একে আটটি ব্যালন ডি’অর; কি জেতেন নি তিনি! ফুটবলে আর কিইবা বাকি আছে তার জয় করার! সবই তো জয় করেছেন। সর্বকালের সেরা ফুটবলার তো তাকে বলাই যেতে পারে।

দেখতে দেখতে আরও একটি বছর পার করে ফেললেন আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার। কোপা আমেরিকা খেলতে আর্জেন্টিনা দল এখন যুক্তরাষ্ট্রে। বুধবার (২৫ জুন) আলবিসেলেস্তেদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী চিলি। তার আগে আজ আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা সবাই মেতেছেন উৎসবে। কারণ মেসির জন্মদিন বলে কথা।

হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে ৩৭ বছর পূর্ণ করে ফেললেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তৃতীয় অধিনায়ক। চলমান কোপা আমেরিকার টুর্নামেন্টেও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আগামী বিশ্বকাপটা খেলবেন কি না, তা বলা মুশকিল। তবে জন্মদিনের সময় এত বড় ফুটবলের আসর আর না-ও আসতে পারে মেসির জীবনে। তাই উৎসব আটকায় কে? কোচ লিওনেল স্কালোনিও তো মেসিরই ভক্ত; এক সময় ছিলেন সতীর্থ। দলের সাফল্যের জন্য অনেকটাই নির্ভর করেন মেসির ওপর। আগামীকাল গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলেও মেসিকে ঘিরে ফুটবলারদের উৎসবে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনটাই নেই স্কালোনির।

ফুটবল ভক্তদের প্রত্যাশারও শেষ নেই। মেসি জেতাবেন, এই বিশ্বাস নিয়েই তারা মাঠে যান; চোখ রাখেন আকাশী-নীল জার্সিধারীদের খেলায়। ৩৭ বছর পূর্ণ করে ফেলা মেসিকে আটকাতে এখনও প্রতিপক্ষ দলের কোচেদের মাথা খাটাতে হয়। বিপক্ষের দু’জন, তিন জন ফুটবলারকে একাই ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন মেসি। তাতে তার সতীর্থদের খেলা সহজ হয়ে যায়। মাঠে তুলনামূলক বেশি ফাঁকা জায়গা পেয়ে যান। সে জন্যই গঞ্জালো মন্টিয়েল, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, ডি-পলরা চান মেসি ২০২৬ সালের বিশ্বকাপটাও খেলুক।

আর্জেন্টিনা শিবিরকে মেসির জন্মদিন ঘিরে কী কী আয়োজন হয়েছে, তা গোপন রাখা হয়েছে। মেসিকেও আগে জানানো হয়নি। তারা আসল উপহার দিতে চান ১৪ জুলাই রাতে। সে তো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভক্তদের আটকায় কে! মেসিকে কাছে পাওয়ার সুযোগ নেই। তবু আনন্দ, উচ্ছ্বাসের খামতিও নেই। যে যার মতো করে মেসির জন্মদিন পালন করছেন।

১৯৮৭ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন মেসি। বাবা জর্জ মেসি ও মা সেলিয়া কুচেত্তিনির তৃতীয় সন্তান তিনি। ১১ বছর বয়সে শরীরে গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা দেখা দেয় তার। চিকিৎসার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। তার চিকিৎসার আশা মেসির পরিবার পাড়ি জমায় বার্সেলোনায়। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে তার ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে বার্সেলোনা। কিশোর মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হন বার্সার ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। ১৪ ডিসেম্বর, কাগজ না পেয়ে ন্যাপকিনে মেসিকে কাতালান ক্লাবে স্বাক্ষর করান তিনি। সম্প্রতি সেই ন্যাপকিন বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ কোটি টাকায়।

কে ভেবেছিল রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলে, যে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজ শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সে একদিন রাজত্ব করবে বিশ্ব ফুটবলে! বিশ্ববাসীকে চেনাবে নিজ শহরকে। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক মেসির জন্য সুখকর ছিল না। ২০০৫ সালের আগস্টে হাঙ্গেরির বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় তার। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ১৮ বছর বয়সী মেসি। তবে মাঠে তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৪৩ সেকেন্ড। সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপর পুরো ক্যারিয়ারে আর মাত্র দুবার লাল কার্ড দেখেছিলেন মেসি।

২০০৫ সালের ১ মে ১৭ বছর বয়সে আলবাসেটের বিপক্ষে বার্সেলোনার জার্সিতে পেশাদার ফুটবলের সিনিয়র পর্যায়ে প্রথম গোল করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কাতালান জায়ান্টদের জার্সিতে গোল করেছেন ৬শর বেশি।

২০১২ সালে স্প্যানিশ লিগে গ্রানাডার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বনে যান বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। পেছনে ফেলেন সিজার রদ্রিগেজের ২২৬ গোলের রেকর্ড। এরপর ৭৭৮ ম্যাচে সর্বমোট গোল করেছেন ৬৭২টি। এতে নাম লেখান বার্সার কিংবদন্তির তালিকায়। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড তার। ২০১২ সালে ৯১ গোল করে এই অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন তিনি। ক্লাবের সর্বাধিক গোলদাতা। একই সঙ্গে দেশের জার্সিতেও সর্বোচ্চ গোল তার।

বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপে জেতেন সেরা ফুটবলারের খেতাব গোল্ডেন বল। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল, ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে গোলের সহায়তা (অ্যাসিস্ট), বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচে অধিনায়ক, মাঠে সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড, সবই তার দখলে।

২০২১ সালে ব্রাজিলের ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে ২৮ বছর পর কোপার শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। আর মেসির ট্রফি কেবিনেট ওঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। এরপর লা ফিনালিসিমার ট্রফিও জেতেন মেসি। ২০২২ সালে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে হারিয়ে অধরা বিশ্বকাপটাও নিজের করে নেন মেসি। তবে ফুটবল ছাপিয়ে অনেক বেশি ভালবাসার, অনেক বেশি আবেগের নাম লিওনেল মেসি।

Exit mobile version