আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়ায় অনেক নেতা হারিয়ে গেছেন, তারা আর জ্বলে উঠতে পারেননি। সেই তারা নিভু নিভু হয়ে গেছেন।
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাঙালির প্রতিটি অর্জনে এ দল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেই তো বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। ‘৭৫-এর আগস্টের পর বার বার ক্ষমতা বদল হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা বদল হয়েছে হয় অস্ত্রের মাধ্যমে; না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না। মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই তারা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেমন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তেমনি আমাদের দলের প্রতিটি পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির যতটুকু অর্জন সেটি আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই হয়েছে। বার বার এ দলের ওপরই আঘাত এসেছে। খণ্ড বিখণ্ড করার চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু গণমানুষের দল বলেই বার বার জেগে উঠেছে এ দল। ঠিক ফিনিক্স পাখির মত৷; কারণ আওয়ামী লীগের শক্তি তৃণমূল। তারা কখনও পরাভব মানে না।’
দল ছেড়ে যারা চলে গেছেন, তারা আর জ্বলে উঠতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আঘাত করেও আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেয়া যায়নি। ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। কারণ আওয়ামী লীগের শক্তি দেশের সাধারণ জনগণ। তৃণমূলের কর্মীরা, সৈনিকরা। তারা কখনও মাথানত করে না। বিভিন্ন সময় নেতারা অনেকে ভুল করেছেন। আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গেছেন। যেসব নেতা ভুল করেছেন, তারা বোঝেননি। চলে যাওয়ায় হারিয়ে গেছেন। হ্যাঁ, অনেকে ফিরে এসেছেন, আমরা গ্রহণ করেছি। আবার অনেকে এখনও সরকার পতনের আন্দোলন করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের পাশে রয়েছে। আজ বাংলাদেশের যত অর্জন, সেগুলো আওয়ামী লীগের দ্বারাই। কিন্তু বারবার এ আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগই গণমানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন। রাজনৈতিক দলের কাজ হলো দেশের মানুষের সেবা করা, মানুষের ভাগ্যন্নোয়ন করা। মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে কাজ করে যাওয়া। যা আমরা করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি ঘাতকের দল। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। শক্তিশালী সংগঠন থাকলে, গণমানুষের সমর্থন থাকলে, এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি বলেই বারবার সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে দেশের জনগণ। দেশের মানুষের আস্থা পূরণ করতে পেরেছি বলেই জনগণ ভোট দিয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারা আছে বলেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞায় আওয়ামী লীগের পাশেই থাকুন সবাই।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে উঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। সভাস্থলের নেতাকর্মীরাও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছার জবাব দেন।
আলোচনা সভার আগে শেখ হাসিনা প্রথমে পায়রা উড়িয়ে দেন। এরপর বেলুন ওড়ানোর পর পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর আসেন আলোচনা সভাস্থলে।
এদিকে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। এরইমধ্যে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
দুপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা বাসে চড়ে ঢাকঢোল, ব্যান্ড বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে করতে মিছিল নিয়ে জড়ো হন। এর আগে সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল শ্রদ্ধা নিবেদন করে।