রোজ গার্ডেন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২৩ জুন। প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৭৫ বছরের দীর্ঘ পথপক্রিমায় নানা উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দলটি। আওয়ামী লীগের সাফল্যের মুকুটে আছে অজস্র অর্জনের পালক, আছে ব্যর্থতাও।
দেশ ভাগের মাত্র দুই বছর পরই বাংলার মানুষ বুঝে যায় নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে পদে পদে বাঙালির অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তেমনি এক সময়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। ৬ বছরের মাথায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দলের নাম থেকে বাদ দেয়া হয় ‘মুসলিম’ শব্দটি।
তারপর ছেষট্টির ৬ দফা, ’৬৮- এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অধিকার উচ্চারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০০৯ থেকে টানা চার দফায় সরকারের দায়িত্বে আছে দলটি। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে এমনটা বললে ভুল হবে না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার, জঙ্গিবাদ নির্মূল, ছিটমহল বিনিময়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রজয়সহ অর্জনের খাতায় বহুবিধ উপাদান আছে আওয়ামী লীগ সরকারের ঝুলিতে।
এসবই মুদ্রার এক পিঠের গল্প। মুদ্রার অপর পিঠে যা আছে তা নিয়ে বিরোধী পক্ষের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।
তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, সব সমালোচনা আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই অতীতের মতো আগামী দিনেও এগিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সময় সংবাদকে বলেন, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার মোকাবিলা করে বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কখনো ভীত না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখুন। আওয়ামী লীগের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশের অসম্পূর্ণ কাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই কেবল সম্পন্ন হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে অর্থনীতির চাপ সামাল দেয়াই সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, আওয়ামী লীগকে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্ষমতার মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। আবার বিশ্বজোড়া যে পরিবেশের চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। খোলাবাজারি অর্থনীতি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বরং বঙ্গবন্ধু যে একটা সমাজতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের মাঝখানে একটা বেন্ডিং করার চেষ্টা করেছিলেন, মিশ্র অর্থনীতির ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন, আজকের যুগে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সেটা খুব জরুরি।
দলটির ২৫ এবং ৫০ বছর পূর্তির মতো ৭৫ বছর পূর্তিতেও সরকারে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সমর্থকের সংখ্যাও নেয়াহেত কম নয়। তবে সত্যিকার অর্থে কত বেশি সমর্থক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করছেন, সেই প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত হবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ।