শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
ভরা বর্ষাতেও নেই বৃষ্টির দেখা। উজানের ঢলে উল্লেখযোগ্য হারে পানিও বাড়েনি করতোয়া নদীতে। এরপরও জীবনের প্রথম করতোয়ায় এমন ভাঙগন দেখলেন সত্তোর্ধ আব্দুর সাত্তার। তিনি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এতে তিনি হারিয়েছেন দুই বিঘা জমি। তার মতো এই এলাকার প্রায় ২০ জন কৃষক হারিয়েছেন অন্তত ২৫ বিঘা জমি। প্রতিদিন ভাঙগনের কবলে পড়ছে নতুন নতুন জমি।
শেরপুরের এই এলাকাতেই করতোয়া নদী সংযুক্ত হয়েছে বাঙালী নদীর সাথে। ফলে দুই নদীর তলদেশের গভীরতা একই ছিলো। এলাকাবাসী জানান, প্রায় তিন মাস আগে সরকারি প্রকল্পের আওতায় বাঙালী নদী খনন করে ১০ থেকে ১২ ফুট গভীরতা বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জগণের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বাঙালী নদীর মাটি দিয়ে করতোয়া নদীর মুখ বন্ধ কর দেয়। জৈষ্ঠ্যের শেষে উজানের ঢলে বৃদ্ধি পায় করতোয়ার পানি। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার কারণে অতিরিক্ত চাপে দুই কূলের আবাদী জমি ভাঙতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শতশত বিঘা জমি হুমকীর মূখে আছে। এ নিয়ে কৃষকেরা আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন।
এলকার নাজির আকন্দ (৪৫) বলেন জানান করতোয়ার ভাঙনে তিনি এক বিঘা জমি হারিয়েছেন। ভারী বর্ষণ শুরু হলে তার অবশিষ্ট জমিও রক্ষা পাবে না।
আব্দুর সাত্তারের মতো বাদশা মন্ডলও (৪৫) জানান তিনিও কখনও এভাবে করতোয়া নদী ভাঙতে দেখেননি। মূলত সংযোগ স্থলে অপরিকল্পিত বাঙালী নদী খনন করে করতোয়ার মূখ বন্ধ করার জন্যই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চৈত্র মাসের শেষে নদী খননের সময় তিনি সহ এলাকার কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদেরকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
এই ঘটনায় ঈদের এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ভাঙগনের স্থান পরিদর্শন করেছন। এরপর সেখানে ৩৫০টি বাঁশ বরাদ্দ করা হয়েছে। ঈদের পরে সেগুলো স্থাপন করা হলেও ভাঙগন থেমে থাকেনি।
এলাকার দুলাল সরাকার (৪২) বলেন, “সরাকারি বরাদ্দের সাথে আমরা নিজেরাও কিছু বাঁশ দিয়েছি। জমি বাঁচাতে স্বেচ্ছা শ্রমও দিয়েছি। কিন্তু জমি গুলো রক্ষা করতে পারছি না। নদী ভাঙতে ভাঙতে রাস্তার কিনারে এসেছে। এখন মনেহয় আমার বাড়িটাও হারাতে হবে।”
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন,”আমরা করতোয়ার নদীর ভাঙগন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করলেও দৃশ্যমান কোন তৎপরতা এখনও লক্ষ্য করা যায়নি। তবে আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।”