Homeঅর্থনীতিসরকার নির্ধারিত মূল্যের বালাই নেই, লোকসানে যশোরের চামড়া বিক্রেতারা

সরকার নির্ধারিত মূল্যের বালাই নেই, লোকসানে যশোরের চামড়া বিক্রেতারা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার- যশোরের রাজারহাটে চামড়া বেচাকেনায় আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যের কোনো তোয়াক্কা করছেন না বলে দাবি করছেন মৌসুমি বিক্রেতারা। এজন্য এবছর ব্যাপক লোকসানের আশংকা করছেন তারা।

শনিবার (২২ জুন) যশোরে ঈদপরবর্তী চামড়া বেচাকেনার হাট ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার বসে যশোরের রাজারহাটে। ঈদপরবর্তী সময়ে তাই এ বাজারের দিকে নজর থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। এ বছর ঈদপরবর্তী প্রথম হাট না জমলেও, দ্বিতীয় হাটে ব্যাপক পরিমাণে চামড়া উঠতে দেখা যায়। যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ দেয়া প্রায় ৩০ হাজার চামড়া নিয়ে হাটে আসেন। এদিন বেচাকেনাও হয়েছে অনেক। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। একেকটি গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনেছেন বলে দাবি করেছেন তারা। লবণ ব্যবহারের ফলে আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু হাটে প্রতি পিস চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

খুলনার পাইকগাছা থেকে চামড়া নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাধন দাস বলেন, ৩৮০ পিস চামড়া নিয়ে আসা হয়েছে এই হাটে। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। একেকটি চামড়া কিনতে ও লবণ ব্যবহারের ফলে খরচ পড়েছে ৭০০ টাকা করে। অথচ ৬৫০ টাকার উপরে কেউ দাম বলছে না। ছাগলের চামড়া নিয়ে আসা হয়েছে ২০০ পিস। ২০ টাকা করে ৮০ পিস চামড়া বিক্রি হয়েছে। বাকি চামড়াগুলো কেউ ৫ টাকাও দাম দিতে চাচ্ছে না। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও, সেই দামে হাটে বেচাকেনা হচ্ছে না। এবছর চরম লোকসানের শিকার হতে হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

সুমন রায় নামে আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি সবচেয়ে বড় গরুর চামড়াগুলো কিনেছি। তাতে লবণ দিয়ে একেকটি চামড়ার পিছনে ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। এ হাটে ৯০০ টাকার ওপরে কেউ দাম বলছে না। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি বর্গফুট চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকার ওপরে বিক্রি করা যাবে না। ৩৫০ পিস চামড়া নিয়ে এখন বিপাকেই পড়েছি।’

আরেক ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ‘সরকার দাম ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাম থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়। আবার সরকারি নজরদারি না থাকায় হাটে এসে কম দামে বিক্রি করতে হয়। আমার আজকের হাটে অন্তত ৪০ হাজার টাকার লোকসান গুনতে হবে।’

এদিকে আড়তদারদের দাবি দাম নির্ধারণ করা হলেও, ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনছেন না। ফলে বাজার অনুপাতে মানভেদে চামড়া সংগ্রহ করছেন তারা।

হাসিব ইসলাম নামে এক আড়তদার সময় সংবাদকে বলেন, ঈদের পরবর্তী হাটে ৩০ ফুটের চামড়া ট্যানারি মালিকরা ১ হাজার টাকা করে দাম দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম দিচ্ছেন না তারা। ফলে আড়তদারদেরও বাজার অনুপাতেই চামড়া কিনতে হচ্ছে। এ কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। তাছাড়া চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার ‘চায়না’মুখী হয়ে গিয়েছে। এ বাজারকে ইউরোপমুখী করা গেলে সুদিন ফিরবে বলে মন্তব্য করেছেন এই আড়তদার।

হাসানুজ্জামান হাসু নামের অপর এক আড়তদার বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। যে চামড়ার মান ভালো, সেটি বেশি দামেই কেনা হচ্ছে। নিম্নমানের চামড়ার দাম বেশি হবে না এটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, আজকে পর্যাপ্ত চামড়া উঠেছে। তবে সেটি আশানুরূপ নয়। আগামী হাটগুলোতে আরও বেশি পরিমাণে চামড়া ওঠবে, তখন দামও কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন এই আড়তদার।

এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে তৃণমূলের ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি কাঁচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘আজকের হাটে প্রায় ৩০ হাজারের মতো চামড়া ওঠেছে। চামড়ার মানভেদে বিভিন্ন দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম কম বললেও, একেবারে লোকসান হচ্ছে না তাদের। চামড়া ব্যবসার সুদিন ফিরিয়ে আনতে গেলে ব্লু বা কাঁচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে। যখন রেমিট্যান্স বেশি আয় করা সম্ভব হবে, তখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও ভালো দাম পাবেন। তাছাড়া চামড়া কেনার জন্য জেলা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদেরও ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা এ খাতকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

শনিবারের হাটে প্রায় ৩ কোটি টাকার চামড়া হাতবদল হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি পক্ষ থেকে।

Exit mobile version