দীর্ঘদিনের প্রেমকে পরিণতি দিতে ২০১৭ সালে প্রেমিকা আন্তনেলা রকুজ্জোর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন লিওনেল মেসি। তাদের বিয়ে রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। দীর্ঘ সময়েও মেসি-রকুজ্জোর দাম্পত্যজীবনে কোন কলহের খবর কিংবা তৃতীয় ব্যক্তির আগমনের কথা শোনা যায়নি। তাদের ঘরে আছে তিন সন্তান থিয়াগো, মাতেও ও চিরো।
ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে শৈশবেই আর্জেন্টিনা ছাড়লেও লিওনেল মেসির হৃদয়ে ছিল এক আর্জেন্টাইন মেয়ের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। সময়ের সঙ্গে মহাতারকা হয়ে উঠলেও প্রথম প্রেমের বাঁধন ছিঁড়ে বের হতে পারেননি মেসি। ফুটবলার হিসেবে যেমন রূপকথার গল্পের মতো অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার তার, তেমনই মেসির প্রেমের গল্প রোমান্টিক সিনেমার চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়।
এই মুহূর্তে কোপা আমেরিকায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন মেসি। শিরোপা ধরে রাখতে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা। এরই এক ফাঁকে এক ইউটিউব প্রোগ্রামে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।
‘রেডি টু ডু এনিথিং’ নামের এই অনুষ্ঠানে খোলামেলাভাবে জীবনের বিশেষ কিছু অধ্যায় নিয়ে মুখ খুলেছেন মেসি। সাধারণত মেসি এ সকল অনুষ্ঠান এড়িয়ে চললেও এ ক্ষেত্রে পারেননি। কারণ এই অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন মেসিরই সহোদর মাতিয়াসের ছেলে টমাস মেসি।
ভাতিজা টমাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন আন্তনেলা রকুজ্জের সঙ্গে কীভাবে তার প্রেমের শুরু।
মেসি শুরুতেও জানিয়েছেন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি কোনো ধরনের ঈর্ষায় ভোগেন কি-না। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এখন না, তবে আগের ব্যাপারে হ্যাঁ, যখন আমার বয়স কম ছিল। একটা সময় ছিল, কিন্তু সেটা এখন নেই। আমি বেশ ঈর্ষাপরায়ণ ছিলাম যখন আমি বাচ্চা , যখন প্রথম প্রথম আমরা প্রেম শুরু করলাম। তারপর আর নেই।’
সাত বছর আগে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে গাঁটছড়া বাঁধেন মেসি-রকুজ্জো। কিন্তু তার আগে দীর্ঘকাল তারা চুটিয়ে প্রেম করেছেন। এই প্রেমের সূচনা যখন শিশু মেসি নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলা সবে শুরু করেছেন। আন্তনেলার কাজিন লুকাসও একজন ফুটবলার ছিলেন। তার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল মেসির। আর লুকাসের মাধ্যমেই আন্তনেলার সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার।
মেসি বলেন, আমি তার (আন্তনেলা) বাসায় যেতাম এবং সেখানে তার সঙ্গে দেখা করতাম, একদম ছোটবেলা থেকেই। আমি তাকে সবসময়ই পছন্দ করতাম। সে সময় ব্যাপারটাকে সে বন্ধুত্বের চেয়ে একটু বেশি কিছুই বলত। পরে, ১৩ বছর বয়সে, আমি স্পেনে চলে যাই এবং কোনোভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগের রাস্তা সেইসব দিনে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ছিল। চিঠি, ইমেইল কিংবা ল্যান্ডলাইনে কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেত, যা অনেক ব্যয়বহুল ছিল। তাও আমরা কথা বলা বন্ধ করে দেই, আমরা পৃথকভাবে বড় হয়ে উঠি। লুকাসের বেলাতেও এমনটাই, শুধু যে তার (আন্তনেলা) বেলাতেই এমন নয়।’
পরবর্তীতে কীভাবে আবার তাদের সম্পর্কটা জমে ওঠে তাও জানান মেসি, ‘১৬ কিংবা ১৭ বছর বয়সে আমরা ফের সাক্ষাৎ করি, ম্যাসেঞ্জার থাকায় যোগাযোগ তখন সহজ হয়ে এসেছে, আমরা সেখানে চ্যাট করতাম। আমরা ফের কাছাকাছি আসি, আমরা শৈশবের সেই অনুভূতিটা হারিয়ে ফেলিনি, কিছুই যেন বদলায়নি। ১৯, ২০ বছর বয়স হতে হতে আমরা ডেট করা শুরু করে দিয়েছি।’
খুব কম বয়সে আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনে পাড়ি জমানোয় নিজের দেশটা খুব ভালোভাবে দেখা হয়নি মেসির। তবে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে নিজের দেশ ঘুরে দেখার বাসনার কথা জানিয়েছেন মেসি। জানিয়েছেন, কোথায় কোথায় যেতে চান, ‘আমার এখনও আর্জেন্টিনা সম্পর্কে অনেককিছুই জানার বাকি আছে, আমি আন্তনেলার সঙ্গে এটা নিয়ে প্রায়শই কথা বলি; পরিবার নিয়ে দেখতে চাই এবং নিজের দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই। অনেকেই এমন সব জায়গার কথা বলেন, যেগুলো সম্পর্কে আমি জানি না এবং আমি সত্যিই সেসব দেখতে চাই। ভবিষ্যতে, যখন এটা (ফুটবল খেলা) শেষ হবে এবং আমার হাতে অনেক বেশি সময় থাকবে, আমি নিশ্চিতভাবে কিছু জায়গা ঘুরে দেখব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইগুয়াজু জলপ্রপাতের কথা, এর সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না এবং আমি এটা ঘুরে দেখতে পারলে আনন্দিত বোধ করব।’