আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছিল সিলেট অঞ্চলে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে বুধবার (১৯ জুন) বিকেল পর্যন্ত ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। সেই পূর্বাভাসকে সত্যি করে রাত থেকে অবিরাম ঝরছে বৃষ্টি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৬টা পর্যন্ত) ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকবে।
এদিকে টানা বর্ষণে এবং উজানের ঢলে সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটের ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে।
এছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
২০২২ সালের পর এবার সিলেট বিভাগের মানুষ আবারও বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। টানা বর্ষণ এবং উজানের ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সিলেট মহানগরীরও বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকছে বলে জানা গেছে। এ বছরের চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতিতে মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে মহানগরে ২১টি ওয়ার্ডের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।
গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। সিলেট জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি।
বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশিদের উঁচু বাসা-বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনের ঘরে।
সিলেট মহানগরীর শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কগোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার পথঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুর।